বিশ্বকাপের শুরু, নেদারল্যান্ডস ছাড়া প্রত্যেক দলের ভাবনাতেই হয়তো ছিল আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়। এমনকি নেদারল্যান্ডসও যদি ভেবে থাকে, তাতেও দোষের কিছু থাকার কথা না। ২০১৫ সালে এক জয়, ২০১৯ বিশ্বকাপে নেই একটাও; এমন দলকে কে ডরাবে! প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ আর পরের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে বড় হারে আফগানিস্তান অন্য দলগুলোর আত্মবিশ্বাসটাই বরং বাড়িয়েছে।
কিন্তু বিধাতার ভাবনায় ছিল ভিন্ন কিছুই। তানাহলে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে কি করে হারিয়ে দিতে পারে রশিদ-নবীদের দল। সেই ম্যাচের শেষে আফগানিস্তান অধিনায়ক বলেছিলেন, “হতে পারে ২০১৫ বিশ্বকাপের পর এটা প্রথম জয়, কিন্তু শেষ জয় না”। জস বাটলারের দলকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাস কতটা বেড়েছে মুজিবদের, তা সেই এক কথাতেই বোঝা গেছে স্পষ্ট। এরপরের গল্পটা তো নতুন ইতিহাস গড়ারই!
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে আফগানিস্তান পাকিস্তানের মুখোমুখি, যেই দলের বিপক্ষে ওয়ানডেতে কি না কখনোই তারা জেতেনি। পরিসংখ্যান, ইতিহাস সব মেন ইন গ্রিনদের পক্ষে, অথচ শেষ হাসি রহমানুল্লাহ গুরবাজ-ইব্রাহিম জাদরানদের। আট উইকেটের বিশাল ব্যবধানে জয়, সেটাও বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা পাকিস্তানের বিপক্ষে। রশিদরা সেদিন উড়েছেন, নিজ দেশের মানুষদের আনন্দে ভাসিয়েছেন।
পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই এক জয় আফগানদের বিশ্বাস জুগিয়েছে, টার্গেট যত বড়ই হোক না কেন, তাদের পক্ষে জেতা সম্ভব। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৭ উইকেট আর ২৮ বল হাতে রেখে ২৪১ রান তাড়া করে জেতার পর যা নিজ মুখেই বলেছেন আফগান ক্যাপ্টেন। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও আফগানরা ব্যাট করেছে দ্বিতীয় ইনিংসে; ১১১ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটের জয় হাসমতুল্লাহর বলা কথাটার মর্ম বাড়িয়েছে।
প্রথম সাত ম্যাচে চার জয়, সেমিফাইনালে একটা পা ততোক্ষণে দিয়েই রেখেছে আফগানিস্তান। অজিদের হারানো গেলেই সহজ হয়ে যেত পথটা। এমনকি অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর কাছেও ছিল জোনাথন ট্রটের শিষ্যরা, কিন্তু শেষ মুহূর্তে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ওমন অতিমানবীয় ইনিংসের পর আসলে কিছুই করার ছিল না। নিশ্চিত জেতা ম্যাচেও বড় হার নিয়ে মাঠ ছাড়ায় আক্ষেপ বেড়েছে, সবচেয়ে বেশি আক্ষেপে পুড়েছেন বোধহয় মুজিব-উর-রহমান। ম্যাক্সওয়েলের খুব সহজ ক্যাচটা যে তিনিই পারেননি তালুবন্দী করতে!
সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে শুক্রবারের ম্যাচে আফগানিস্তানকে জিততে হতো ৪৩৮ রানে, তাহলেই একমাত্র জায়গা নিশ্চিত করা যেতো চার নম্বরে। প্রথম ইনিংসে ২৪৪ রান করে সেই আশা আগেই ফুরিয়েছে। আফগানিস্তানের জন্য তবুও অসম্ভব সুন্দর এক যাত্রা হতো এই বিশ্বকাপ, যদি শেষ অব্দি সাউথ আফ্রিকাকেও হারানো যেত। রশিদরা চেষ্টা করেছেন ঠিকই, কিন্তু খুব কাছে গিয়ে মেনে নিয়েছেন পরাজয়। ৭৬* রানের ইনিংস খেলে ১৫ বল হাতে রেখেই ম্যাচটা নিজেদের করে নিয়েছেন রাসি ফন ডার ডাসেন, সাউথ আফ্রিকার জয় ৫ উইকেটে। মোহাম্মদ নবী আর রশিদ খান, দুজনই নিয়েছেন দুই উইকেট করে।
আফগানিস্তান হেরেছে, তবুও তারা বিশ্বকাপ শেষ করছে মাথা উঁচু করে। যেই দল এক ম্যাচ জিতবে, সেটাও আসরের শুরুতে ভাবতে কষ্ট হচ্ছিলো অনেকের, সেই দল চার ম্যাচে জয় নিশ্চিত করে, পয়েন্টস তালিকার ছয়ে থেকে শেষ করল বিশ্বকাপ অভিযান। সবশেষে এই যাত্রাকে সুন্দর না বলে কোনো উপায় আছে কি? অনেক পাওয়ার ভীড়ে এই বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি নিশ্চিতভাবেই রশিদ-নবী-মুজিব-রহমত-হাসমতুল্লাহ-গুরবাজ-জাদরান-আজমতুল্লাহদের এই আফগানিস্তান।