তাঁকে বলা হয় বাংলাদেশ টিমের সবচেয়ে পরিশ্রমী ক্রিকেটার। কোন সিরিজ বা টুর্নামেন্ট না থাকলেও নেটে এসে ঘাম ঝড়াতে দেখা যায় তাঁকে। যদি নির্দিষ্ট করে বলা হয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতির কথা, সেখানেও মুস্তাফিজুর রহমান ও সাকিব আল হাসানের পর সবচেয়ে সেরা প্রস্তুতি হয়েছিলো মুশফিকুর রহিমেরই। সাকিব মুস্তাফিজ আমিরাতে আইপিএল খেলেছেন, মুশফিক চট্টগ্রামে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে এইচপি ইউনিটের বিপক্ষে খেলেছেন প্রস্তুতি ম্যাচ; দারুণ দুটো পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংসও খেলেছেন। দেশ ছাড়ার আগেও বলেছিলেন, ‘রিয়েল গেম সিচুয়েশনে’ ম্যাচ প্র্যাক্টিসটা তাকে কতোটা সুবিধা ও আত্মবিশ্বাস দেবে।
তবে দেশ ছাড়ার পর থেকে দেখা গিয়েছে পুরো উল্টো চিত্র। ওমান ‘এ’ দলের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচে সেই ‘গোল্ডেন ডাক’ দিয়ে শুরু, এরপর প্রস্তুতি ম্যাচ ও প্রথম পর্ব মিলিয়ে ৫টি টি-টোয়েন্টির প্রতিটিতে মুশফিক নিজেকে হারিয়ে খুঁজেছেন। ০, ১৩, ৪, ৩৮, ৬, ৫- মুশফিকের শেষ ৫টি ইনিংস। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ওই ৩৮ রানের ইনিংসটিকেও ম্যাচ প্রেক্ষাপটে ‘ভালো’ বলার জো নেই। সব মিলিয়ে ‘মিঃ ডিপেন্ডেবলের’ যাচ্ছে চরম দুঃসময়।
তবে আজ হয়তো বদলে যেতে পারে চিত্র। সুপার টুয়েলভের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ব্যাট হাতে আবারো জ্বলে উঠতে পারেন মুশফিকুর রহিম। ফিরে আসতে পারেন ‘মিঃ ডিপেন্ডেবল’। কিভাবে? বলছি সেটিই-
প্রথমতঃ প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা- যাদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বলুন টেস্ট বলুন বা ওয়ানডে- মুশফিকুর রহিমের সাম্প্রতিক বা সর্বশেষ পারফরম্যান্স খুবই চমৎকার। এইবছরের মে মাসে তিন ওয়ানডের সিরিজ খেলতে শ্রীলঙ্কা আসে বাংলাদেশে। সিরিজটা তারা মূলত মুশফিকের ব্যাটের সামনেই হেরে যায়। তিন ম্যাচে যথাক্রমে ৮৪, ১২৫ ও ২৮ রান করেছিলেন মুশফিক, হয়েছিলেন ম্যান অব দা সিরিজ। এর আগে এপ্রিলে বাংলাদেশ যায় শ্রীলঙ্কায়, দুই টেস্টের সিরিজ খেলতে। তিন ইনিংসে মুশফিকের রান ৬৮*, ৪০ ও ৪০। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মুশফিক টি-টোয়েন্টি খেলেছেন অবশ্য তিন বছর আগে, তবে সেখানেও রয়েছে সুখস্মৃতি। ২০১৮ নিদাহাস ট্রফিতে মুশফিকের সেই ৩৫ বলে ৭২* রানের ইনিংসটা তো ইতিহাসেই ঢুকে গেছে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে ফরম্যাট যাইহোক, শ্রীলঙ্কাকে পেলেই জ্বলে উঠেন মুশফিকুর রহিম। এই ব্যাপারটি ম্যাচের আগে মনস্তাত্বিক দিক দিয়ে এগিয়ে রাখতেই পারে মুশফিককে।
দ্বিতীয়তঃ শারজাহর উইকেটের চরিত্র- এপ্রিল মে মাসের বাংলাদেশ বা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজে মিরপুরের যে মন্থর ও নিচু উইকেটে রানের বন্যা ছুটিয়েছিলেন মুশফিক, শারজাহর এই উইকেট অনেকটা তেমনই, বা তারচেয়েও মন্থর। বাংলাদেশে স্পিনের বিপক্ষে সবচেয়ে ভালো টেকনিক মুশফিকের। এমন উইকেটে লঙ্কান স্পিনারদের কিভাবে সামলাতে হবে, এই মুহুর্তে মুশফিকের চেয়ে ভালো বাংলাদেশ টিমে সম্ভবত কেউ জানে না। এই ম্যাচে আকিলা দনাঞ্জয়া, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাদের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি তাই হয়ে উঠতে পারেন মুশফিক।
ক্রিকেটে নির্দিষ্ট দিনে যেকোন কিছুই হতে পারে সুতরাং এমন নয় যে এই লেখাটি কোন ভবিষ্যদ্বাণী। তবে উপরোক্ত দুটি ব্যাপার যদি মুশফিক মাথায় রেখে নামেন, এবং আজকের ম্যাচে শট সিলেকশনে মনোযোগী হয়ে যদি টেম্পারামেন্টটা ঠিক রাখতে পারেন, এই ম্যাচে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মাঝে পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন মুশফিকুর রহিম, ফিরে আসতে পারেন ফর্মে। বাংলাদেশকে সুপার টুয়েলভের প্রথম ম্যাচটি জেতাতে ‘মিঃ ডিপেন্ডেবল’ রাখতে পারেন বড় ভূমিকা।