আজাজ ইউনুস প্যাটেলের বলে সুইপ করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরে যাচ্ছিলেন জাকির হাসান, ক্যামেরাও তাক করা ছিল টাইগারদের টপ স্কোরারের দিকে। তখনই চোখে ভাসে দূরে সিজদাহ করছেন আজাজ, মাত্রই যিনি শিকার করেছেন ফাইফার। পরবর্তীতে এই ছবিটাই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়, অনেকের কাছেই এটা ‘ফটো অব দ্য ডে’।

দিনের সেরা ছবি কিনা কে জানে, কিন্তু আজাজ এই দিনটা মনে রাখবেন অনেকদিন; এদিনই টেস্ট ক্রিকেটে নিজের চতুর্থ ফাইফার পেলেন কিউই এই বাঁহাতি স্পিনার। শুধু তাই না, পাক্কা দুই বছর পর ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিলেন আজাজ।
২০২১ সালের ডিসেম্বরের ঘটনা, মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়েতে ভারতীয় ইনিংসের দশটি উইকেটই শিকার করেছিলেন আজাজ। জিম লেকার এবং অনিল কুম্বলের পর তৃতীয় বোলার হিসেবে সেই কীর্তি গড়েছিলেন আজাজ। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার, ঐ টেস্টে ১০ উইকেট পেলেও কম্বিনেশনের কারণে পরের টেস্টের দল থেকেই বাদ পড়েন। পরবর্তী টেস্ট খেলতে ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই স্পিনারের লেগেছিল ৭ মাস। মাঝের সময়টা আজাজের জন্য প্রচন্ড সংগ্রামের ছিল, যেমন সংগ্রামের ছিল তাঁর ক্রিকেটার হওয়ার জার্নি।

যেখানে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন, আজাজের জন্মও সেই মুম্বাইয়ে; ৮ বছর বয়সে রেফ্রিজারেটর মেকানিক বাবা ইউনুস ও স্কুল শিক্ষিকা মায়ের সাথে নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমানোর আগে ক্রিকেটের হাতেখড়িও সেখানে। প্রথম কোনো ক্রিকেট ক্লাবে আজাজ ভর্তি হন নিউজিল্যান্ডে গিয়ে, যদিও ছোটবেলায় ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন তিনি একেবারেই দেখতেন না। তাঁর চাচা সাঈদ প্যাটেল সর্বপ্রথম তাঁকে এবং তাঁর চাচাত ভাইকে অকল্যান্ডের নিউ লিন ক্রিকেট ক্লাবে ভর্তি করিয়ে দেন।

ক্যারিয়ার শুরু করেন পেস বোলার হিসেবে। এমনকি অ্যাভনডেল কলেজের প্রথম পছন্দের পেসারও ছিলেন এই বাঁহাতি। সেই সময় তাঁর সতীর্থ ছিলেন মার্টিন গাপটিল এবং জিৎ রাভাল। রাভাল আবার তাঁর স্কুল ফ্রেন্ড। পরবর্তীতে সাবেক কিউই অফস্পিনার এবং তৎকালীন অকল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচ দীপক প্যাটেলের পরামর্শে পেসার থেকে স্পিনার বনে যান। ভাগ্যিস, আজাজ সেদিন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন; না হলে বিংশ শতাব্দীতে কেউ ইনিংসে ১০ উইকেট নিচ্ছেন, এই ঘটনা হয়তো দেখাই হতো না।
২০১৮ সালে আজাজের টেস্ট অভিষেক, এর আগে টানা তিন মৌসুম দেশটির প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ছিলেন এই বাঁহাতি। ঘরোয়া ক্রিকেটের সাফল্য ধরে রেখেছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও। অভিষেকেই দুই ইনিংস মিলিয়ে ৭ উইকেট, ম্যাচসেরা। সবমিলিয়ে ৩৫ বছর বয়সী এই বাঁহাতি স্পিনার এখন পর্যন্ত ১৬ টেস্টে নিয়ে ফেলেছেন ৬২ উইকেট।