মৃত্যু চিরসত্য, কিছু মৃত্যুর আবেগ সত্যকেও ছাড়িয়ে যায়, কিছু মৃত্যু আর কটাদিন না পাওয়ার অপেক্ষা বাড়ায়। মানজারুল ইসলাম রানা, রেকর্ড বইয়ে নাম তুলেছেন, সবচেয়ে কম বয়সে মৃত্যুবরণ করা টেস্ট ক্রিকেটার আমাদের রানা, রানার আগে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার আর্চি জ্যাকসন। রেকর্ড নাকি হয় ভাঙ্গার জন্যে, তবে রানার এই রেকর্ড ভাঙ্গুক সেটা হয়তো কেউই চাইবে না।
দুই হাজার সাতের ষোলই মার্চ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পয়লা ম্যাচের ঠিক আগের দিন; হাবিবুল বাশার – মাশরাফীরা যখন ভারত বধের পরিকল্পনায় ব্যস্ত, রানা ততক্ষণে ধরেছেন পরলোকের টিকিট। শোক কে শক্তিতে রূপান্তর করতে এমন কিছুরই হয়তো প্রয়োজন ছিল, সেই প্রয়োজনই কি মিটিয়েছিলেন রানা? দলের সাথে না থেকেও ছিলেন, জয়টাও তাই রানাকেই উৎসর্গ করা হয়েছিল। মৃত্যু সব মায়ার উর্ধ্বে; ম্যাচ জয়, উৎসর্গ এসব কিছু কি রানাকে আদৌ স্পর্শ করেছিল? সম্ভাবনা খুবই কম।
রানা খুব মেধাবী ক্রিকেটার ছিলেন এমন বলাটা বাড়াবাড়ি, তবে ক্রিকেট তিনি ভালোবাসতেন, সামর্থ্যের সবটা দিয়েই হয়তো চেষ্টা করতেন। ছয় টেস্টে পঁচিশের সামান্য বেশি গড়, উইকেট পাঁচটা, ওয়ানডেতেই বরং ছিলেন বেশি কার্যকরী। পঁচিশ ম্যাচে বিশের বেশি গড়, উইকেট তেইশটা, ইকোনমি চারের কিছু বেশি। বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে সিরিজ জয়ে ছিল রানার অবদান। সেই সিরিজে পয়লা দুই ম্যাচে হেরেছিল বাংলাদেশ, তিন ও চার নম্বর ম্যাচে রানা ম্যান অব দ্য ম্যাচ। বাংলাদেশ জিতেছিল পাঁচ নম্বর ওয়ানডে, সাথে সিরিজ।
মাইকেল ভন, রানার প্রথম আন্তর্জাতিক উইকেট। প্রয়াত রানার আগে অভিষেকের প্রথম ওভারে উইকেট পাননি বাংলাদেশের কোনো বোলার। সেদিন রানার বলে প্যাভিলিয়নে ফিরেছিল ভন; আজ ভন আছেন; আমাদের রানা নেই। জীবনের খেলা হয়তো ক্রিকেটের চেয়েও কঠিন, কঠিন হঠাত উঠে আসা বাউন্সারের চেয়েও। রানাতো কতো বাউন্সার মোকাবেলা করেছেন, মৃত্যুকেতো ফাঁকি দিতে পারলেন না।
জেমস সাদারটন, সবচেয়ে বেশি অভিষেক হওয়া টেস্ট ক্রিকেটার, রানা যেই বয়সে মারা গেছেন তার দ্বিগুণেরও বেশি বয়সে সাদারটনের টেস্ট অভিষেক, আবার যেই আর্চির রেকর্ড ভেঙ্গেছিলেন রানা সেও তো ওপারে। সেখানে কি ক্রিকেট ম্যাচ হয়? রানা কি সেখানে খেলেন? অনর্থক প্রশ্ন। প্রয়াণ দিবসে মানজারুল ইসলাম রানাকে স্মরণ করছে অলরাউন্ডার।