অস্ট্রেলিয়ার মতো ক্রিকেটে শক্তিধর দেশকে বাংলাদেশ টি-২০ ইন্টারন্যাশনালে পরপর দুটি ম্যাচে নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছে। আমাদের কাছে এই জয় বড় আকাঙ্ক্ষার। তবে বহু প্রতীক্ষার ফলাফলের চেয়ে হয়তো অনেক আগেই শক্তিধরের তালিকায় জায়গা পেতো বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন।
সদ্য যুদ্ধ থেকে ওঠা দেশের জন্য অন্যান্য সবকিছুর সাথে সংস্কৃতি আর ক্রীড়াকে সংগঠিত করার অভূতপূর্ব উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন একজন ক্ষণজন্মা প্রতিভাবান সংগঠক।
স্বাধীন বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন ও সংস্কৃতিতে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা অপরিহার্য ও অবিচ্ছেদ্য অংশ।
তরুণ বয়স থেকেই ক্রিকেট। ঢাকার আজাদ ক্লাবের দীর্ঘদেহী ফাস্ট বোলার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ হলের বাস্কেটবল দলের টানা সেরা হওয়ার গৌরব নাকি বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন এর জন্য আবাহনী ক্লাব গঠন? কোনোকিছুতেই কম কৃতিত্ব নেই। স্পন্দন সাংস্কৃতিক সংগঠন অথবা কোলকাতায় মুনীর চৌধুরীর “কবর” মঞ্চায়ন, ঢাকা থিয়েটার, বিতর্ক, সেতার, প্রতিবাদে রবীন্দ্রসংগীত মঞ্চে গাওয়ার রুচিশীল উদ্যোগ – সব মিলিয়েই শেখ কামাল। শেখ কামাল সেই ক্ষণজন্মা প্রতিভা যার গুনের কদর হয়তো লিখে শেষ করা যাবেনা৷ সেই সমস্ত কিছু লিপিবদ্ধ করতে গেলে আমাদের-ই বরং হাপিয়ে উঠতে হবে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সবথেকে বড় নেতার সন্তান পাক হানাদার বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সেনাবাহিনীর ব্যাচের অফিসার তো বটেই। আজীবন তাই নিজের পরিচয়ের মাধ্যমেই তাকে স্মরণ করা যায়। প্রতিভাকে তুলে ধরার জন্য কঠোর পরিশ্রমী বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল সেই ক্ষণজন্মা বিনয়ীদের ও একজন৷
টাঙ্গাইলের একটি অতিথিশালায় ১৯৭৪সালের ডিসেম্বরে অবস্থান করছিলেন শেখ কামাল। দেশ প্রধানের জেষ্ঠ্যপুত্র হিসেবে বাড়তি সুবিধা তো দূর, ঢাউস এর খাতাটিতে সাইন করে লিখেছিলেন-
শেখ কামাল, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। নিজের বিভাগ,নিজের বিশ্ববিদ্যালয়, নিজের যতটুকু আছে সেটুকুই তার সবচেয়ে বড় পরিচয়। আবার তারপরের দিন বের হবার সময়ে সবিনয়ে লিখেছিলেন ” একটি কাপ ভেঙ্গেছি”। এই সততার প্রয়োজন ছিলোনা তবুও এই সততার রক্তের সাথে লালন করতেন শেখ কামাল। [তথ্যসূত্র : মাহমুদ হাসান,বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব]
এই বিরল বিনয়,বিরল সততার মানুষটিকে এখনো অপবাদের যে বোঝা বইতে হয় সেগুলো নিয়ে তরুণ প্রজন্মের কাছে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। মেজর ডালিম কান্ড অথবা ব্যাংক ডাকাতির গুজব, মেজর ডালিমের নিজের লেখা বই এবং সেসময়ের ব্রিটিশ সাংবাদিক। প্রত্যেকের নিজস্ব চাক্ষুষ প্রমাণে বারবার সামনে উঠে আসে আমরা কিভাবে বাংলাদেশের বুকে পাওয়া একজন কোহিনূরের প্রাপ্য সম্মান কেড়ে নিয়েছি। ইতিহাসে তার নিজের অর্জন এই সব ভেসে আসা গুজবকে নাকচ করে দিয়েছে নিজেই। অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মত স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য অবদান এবং স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য যেই পরিশ্রম, মেধা এবং নতুন দিগন্তের সূচনা তিনি করেছিলেন সেইসমস্ত কিছুর জন্য মাথা নত হয়ে আসে গভীর শ্রদ্ধায়।
একটি দেশের সামাজিক বিপ্লব ও উন্নয়নের জন্য ক্রীড়া এবং সংস্কৃতির অবদান অনেক বেশি।
১৯৪৯ সালের ৫ই আগষ্ট যেই নক্ষত্র জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি যদি ক্ষণজন্মা না হতেন সামাজিক উন্নয়নে বিপ্লবের অবস্থানেই থাকতো বাংলাদেশ। স্বপ্নের পদক গুলো আমাদের হয়তো হতো কারণ সেভাবেই দ্রুত দীপ্ত পায়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন শেখ কামাল।
জন্মদিনে এই বিরল বিনয়ী মানুষকে, অসীম প্রতিভাবান সংগঠককে, মেধাবী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। শুভ জন্মদিন আপন আলোয় উদ্ভাসিত বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল, যিনি নিষ্পাপ মন নিয়ে রাষ্ট্রপ্রধানের সন্তান হয়েও সহজ স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন “একটি কাপ ভেঙ্গেছি”।
লেখক : ইমতিয়াজ বুলবুল বাপ্পি।
সাবেক ছাত্রনেতা,
সদস্য – বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।