চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম তৌহিদ হৃদয়ের প্রিয় মাঠ কি না কে জানে! প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ক্যারিয়ারের প্রথম শতকটাকেই ডাবলে পরিণত করার গল্পের শুরুটা তো এখানেই। বুধবার বিসিবি উত্তরাঞ্চলের বিপক্ষে গড়েছেন এই কীর্তি। কিন্তু, হৃদয়ের জীবনে এই মাঠের ভূমিকাটা বুঝতে হলে পিছিয়ে যেতে হবে আরও কয়েক বছর!
নভেম্বর, ২০১৯; চট্টগ্রামে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ খেলতে শ্রীলঙ্কা অনূর্ধ্ব-১৯ দল। প্রথম ম্যাচ ভেসে গেল বৃষ্টিতে, দ্বিতীয় ম্যাচ থেকে শুরু হৃদয়ের রুপকথার। ৮২* রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে এনে দিলেন ৫ উইকেটের জয়। এরপরের টানা তিন ম্যাচে যা করেছেন তা বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে করতে পারেনি আর কেউই। ১২৩*, ১১৫ আর ১১১ রানে করে ফেললেন সেঞ্চুরির হ্যাটট্রিক! চার ম্যাচে সংগ্রহ ৪৩১ রান, গড় ২১৫!
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাজশাহী ঘুরে আবারও সেই চট্টগ্রামে তৌহিদ হৃদয়! ফার্সট ক্লাস ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ৬৮ রানের ইনিংসটিও খেলেছিলেন এই চট্টগ্রামেই। শেষ ছয় ইনিংসে আছে চার অর্ধশতক; ৪৪ গড়ে রান ২৬২। কিন্তু, অর্ধশতকটাকে কোনোভাবেই শতকে পরিণত করতে পারছিলেন না যুব বিশ্বকাপজয়ী এই খেলোয়াড়।
অবশেষে পেরেছেন। সানজামুল ইসলামকে টানা দুই বলে এক চার এবং এক ছয় হাঁকিয়ে পূরণ করেছিলেন একশো, তবে নিজের দুইশো পূরণ করতে নিয়েছেন সময়। প্রথমবার দারুণ এক মাইলফলকের সামনে দাড়িয়ে বলেই হয়তো নার্ভাসনেসটা চোখে পড়লো সহজেই। কিছুটা অস্বস্তিবোধ হচ্ছিল বৈ কি! সেজন্যই হয়তো রান নিতে ওমন তাড়াহুরো! একটু এদিক ওদিক হলেই নার্ভাস নাইনটিজেই হতে পারতেন দুইবার রানআউট! তাতে কি? হৃদয় ঠিকই তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি, নিয়েছেন স্বস্তির নিঃশ্বাস।
খুব ছোটবেলায় ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখেন হৃদয়, মাত্র সাত বছর বয়স থেকেই বাসার পাশের মাঠেই হতে থাকে দিন পেরিয়ে রাত। ঢাকায় এসেছিলেন বড় ক্রিকেটার হতে, এসেই বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে খেয়েছিলেন অনেক বড় ধাক্কা। বনশ্রীর ভুয়া এক ক্রিকেট ক্লাবে ভর্তি হয়ে নষ্ট করতে হয়েছিল বড় অঙ্কের টাকা। ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নে ঐ প্রথমবার এসেছিল বাধা, কিন্তু সেই বাধাটাকে উপেক্ষা করেই নিজেকে এগিয়ে নিয়েছেন হৃদয়।
বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই ব্যাট হাতে ছড়িয়েছেন আলো। অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শতকের মালিক, সবচেয়ে বেশী সেঞ্চুরি এক সিরিজে এমনকি এক পঞ্জিকাবর্ষেও! কত কত রেকর্ড নামের পাশে, কিন্তু ধারাবাহিকতার অভাবে খেলা হয়নি জাতীয় দলে।
বন্ধুদের অনেকেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ পেয়ে গেছেন, হৃদয়ের এখন অব্দি অর্জন পাকিস্তান সিরিজের ক্যাম্পে ডাক পাওয়া। তাতে কি! হৃদয় ভালো করেই জানেন তার কাজটা। আর, সেটাই তো করে চলেছেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে! জাতীয় দলে ডাক পাওয়া তো এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।