১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, শনিবার

জন্মদিনে লিওকে খোলা চিঠি

- Advertisement -

শুভ জন্মদিন, লিও!

তোমার কাছে পৌঁছাক এই দূরবর্তীর এই হৃদয় ঝরা ভালোবাসা। শুধু এই বিশেষ দিনে নয়। আমি অক্ষরজীবী আমৃত্যু তোমার স্বর্গীয় বাঁ পায়ের বন্দনা রচি দুর্বল শব্দমালায়।

নৈবদ্যের কারণটুকু আগে জানাই।

ছবি: ইন্টারনেট

আমি আর্জেটিনা বা ব্রাজিল সমর্থক নই। শৈশবে বিশ্বকাপে সাম্বার ছকে খেলা ব্রাজিল সমর্থক ছিলাম। তখন বাসায় না ছিল ইন্টারনেট অথবা ডিস কানেকশন। ইউরোপিয় ফুটবল দেখার সুযোগ আসে অনেক পরে। তা আসার পর টিকিটাকা নকশার বার্সেলোনা ফ্যান হয়ে যাই। মাঠ জুড়ে পিকে, ফ্যাব্রিগাস, জাভি, ইনিয়েস্তা, আর তুমি। কী যৌথতাই না ছিল তোমারদের! তা হবে নাই বা কেন? তোমাদের প্রায় সব্বাই তো লা মেসিয়া’র শিক্ষা ভূমির একনিষ্ঠ ছাত্র। এই লা মেসিয়া পর্যন্ত আসা তোমার জন্য সুলভ ছিল না।

লিও জাদু, তোমাকে ভালোবেসেছি তোমার লড়াইয়ের জন্য।

ছবি: টুইটার

তুমি রাজধানীর রাজনন্দনের কেউ নও। বুয়েন্স আইরেস থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে পারানা নদীতটের রোজারিওতে তোমার আবির্ভাব গত শতকের ৮৭ তে। তাও যদি হতে বাপের টাকাওয়ালা পরিবারের কেউ! বাবা জর্জ মেসি আর মা সেলিয়া কুচিটিনি এক কথায় শ্রমজীবী। নাদুস নুদুস তুমি ছিলে না কোনো কালেই। লিকলিকে তোমার প্রাণ ভোমরা ছিল শুধুমাত্র বাতাস ভরা ফুটবল। ম্যারাডোনার দেশ তোমার। আর সবার মতো তোমার পরিবারটিও ছিল ফুটবলঘেঁষা। ভাইয়েরা খেলত, কাজিনরা খেলত। বাবাও সময় পেলে শেখাতেন বলের জাদু। বেশি আস্কারা পেয়েছিলে নানু সেলিয়ার কাছ থেকে। তোমাকে মাঠে নিয়ে বসে থাকতেন ঘন্টার পর ঘন্টা। তোমার ১১ বছর হতে না হতেই নানুর বিদায়। এখনও তোমার হাহাকার এই নানুর জন্য। প্রতিটি গোলের পর দু’হাত তুলে তুমি আকাশে নানুকে দেখ আর দেখাও- এই যে আমি।

মাত্র ৬ বছর বয়সে রোজারিও’র ক্লাব নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজে মাঠ দাঁপানো। ৫০০ গোল করেছিলে এ ক্লাবের হয়ে। ১০ বছর বয়সেই তোমার ফুটবল যাত্রা শেষ হতে পারতো। দুরারোগ্য হরমোনজনিত ব্যাধি ধরা পড়ে। যার চিকিৎসায় লাগবে মাসে ১ হাজার ডলার। কোত্থেকে আসবে টাকা? কোনো আর্জেন্টাইন ক্লাব দায়িত্ব নেয় নি। তোমার পারিবারিক যোগসূত্র ছিল স্পেনের কাতালোনিয়ার সাথে। তোমরা সেখানে চলে যাও। সেখানে তোমার ফুটবল শৈলীতে মুগ্ধ বার্সা জুনিয়র টিমের কর্তারা। একটি পেপার ন্যাপকিনে সাইনিং নিষ্পন্ন হয়। এরপর থেকে নুক্যাম্প তোমার ঘর বাড়ি আর ঝোড়ো ফুটবলের সাক্ষী। এখনও চেপে রাখা কাতালোনিয়ার মুক্তি সংগ্রাম দাবায়া রাখা যাবে না। তুমিসহ বার্সা তো এ নিয়ে একাত্ম।

ছবি: টুইটার

তুমি আজ ত্রাণকর্তা বার্সার, তুমি ভরসা আর্জেটিনার। অনেক কিছু সইতে হয় তোমাকে। বিশ্বকাপ ছোঁয়া হয়নি আজও। এ দায় যেন একক তোমার। এক ম্যাচে গোল ঢুকাতে না পারলে ট্রল হয়। লোকেরা ভুলে যায় তোমার জেতা ৬টি ব্যালন ডি’অর। ৪ চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি। ১০ টি লা লিগা শীর্ষের একচ্ছত্রতা। সেই সঙ্গে ৭৫০ টি সিনিয়র ক্যারিয়ার গোল। আর সব গোল অ্যাসিস্টের হিসেবে তো সুপার কম্পিউটারও রাখতে অক্ষম।

পা দিয়ে ভাগ্য বদল করেছো তুমি। ডলারে উপচে পড়া আজকের তুমি। অ্যাডিডাস টাকা ঢেলেই যাচ্ছে। এনডোরর্সমেন্টের তীর্থ তুমি। বছরে এক বিলিয়ন ডলারের চেয়ে বেশি আয়ের নজির আছে তোমার। বাড়ি, গাড়ি, ইয়ট, বিমান সব তাক লাগানো। স্বপ্নের বলের পেছনে ছুটেছিলে। তাই সম্পদ এখন পদতলে।

মাঠে মাঝে মাঝে মেজাজ হারাও। আছে ট্যাক্স ফাঁকির প্রমাণ। কিন্তু আলো অন্ধকারের সমাহারেই তো মানুষ। ভিনগ্রহের ফুটবলার তুমি মাঠে। বাস্তবের তুমি দোষে গুণের মানুষই। জন্মদিনে তোমার গালমন্দ করতে চাই না।

ছবি: টুইটার

এত শৈশবে তারকা খ্যাতির পরও তোমার মধ্যে নারী বিষয়ক বখাটেপনার তেমন নজির পাওয়া যায় না। কোনো সুপার মডেল জীবন সাথী হয় নি তোমার। জন্মভূমি রোজারিওই মেয়ে অ্যান্তেনেলা রোকোজ্জোর প্রেমে পড়েছ তুমি। ৫ বছর বয়সে যাকে তুমি প্রথম দেখ।

আচ্ছা, তোমরা কি তখন একটা স্যান্ডউইচ দু’জন ভাগাভাগি করে খেতে? থিয়াগো, মাতেয়ো, সিরো বড় হচ্ছে। শিখিয়ে দিও ওদের জীবনে লড়াইয়ের  কায়দা।

ছবি: টুইটার

আবারও শুভেচ্ছা লিও! শুভ দিনে ‘করো আনন্দ আয়োজন করে…’। আপাতত বিদায়।

হাসান শাওন, ২৪.০৬.২১

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -

সর্বশেষ

- Advertisement -
- Advertisement -spot_img