ফরম্যাট যেটাই হোক, ক্রিকেটে সবসময়ই দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করা কঠিন। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে রান তাড়ার একটা ব্যাপার থাকে, টেস্টে ব্যাপারটা আরো কঠিন; বিশেষ করে উপমহাদেশের প্রথাগত স্পিন ফ্রেন্ডলি উইকেটে। কারণ যত দিন গড়ায় উইকেট ভাঙে, ব্যাটিং করা কষ্টকর হয়। সেখানে জাকির হাসানের জন্য দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করাই যেন সবচেয়ে সহজ কাজ!
মিরপুর টেস্টেই দেখুন না। এমন স্লো-টার্নিং উইকেটে বাংলাদেশ দলের অন্য ব্যাটাররা যেখানে দাঁড়াতেই পারেননি; জাকির সেখানে খেলেছেন ৮৬ বল, করেছেন ৫৯ রান। বাঁহাতি এই ওপেনারের ইনিংসের মূল্য আরো বাড়বে, যখন শুনবেন দলের আর কেউ ২৫টি বলও খেলতে পারেননি! ২৪ বল খেলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫ রান করেছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত; এই দুজনের বাইরে দুই অংকের ঘরেই গিয়েছেন মাত্র দুইজন, তাইজুল ইসলাম ও মুমিনুল হক। এমনকি এই চারজন বাদে ১৫ বল উইকেটে টিকতে পেরেছেন একজন, ১৯ বলে ৯ রান করা নাঈম হাসান!
১০০, ৫১, ৭১, ১৭, ৫৯; টেস্ট ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত ৫ ম্যাচ খেলা জাকিরের দ্বিতীয় ইনিংসের রান। অর্থাৎ ১০ ইনিংসে খেলা ৪টি ফিফটি প্লাস ইনিংসের সবগুলোই এসেছে দ্বিতীয় ইনিংসে; এবং সেগুলোও বাংলাদেশের মতো উইকেটে, ভারত-নিউজিল্যান্ডের মতো বোলিং লাইন আপের বিপক্ষে। এখন পর্যন্ত ১০ ইনিংসে ৩৫৪ রান করেছেন জাকির, গড় ৩৫.৪০। এর মধ্যে শুধু দ্বিতীয় ইনিংসেই করেছেন ২৯৮ রান, গড় বেড়ে দাঁড়ায় ৫৯.৬০।
আনন্দ-বেদনা মিলেই জীবন। জাকিরের দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিং আনন্দ দিলে, হতাশ করবে প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং। এখন পর্যন্ত প্রথম ইনিংসে ৫ বার ব্যাটিংয়ে নেমে করেছেন মাত্র ৫৬ রান! না ভুল পড়ছেন না, প্রথম ইনিংসে জাকিরের রান মোটে ৫৬। গড় ১১.২০, সর্বোচ্চ ২০; যেটা আবার খেলেছিলেন নিজের প্রথম টেস্ট ইনিংসে।
টেস্ট ক্রিকেট দুই ইনিংসের খেলা। এখানে শুধু এক ইনিংস ভালো খেললেই চলে না, উভয় ইনিংসেই ভালো খেলতে হয়। কেননা একটা মাত্র সেশনেই ম্যাচের মোড় ঘুরে যেতে পারে, হাতছাড়া হতে পারে জয়। তাই টেস্ট দলের নিয়মিত সদস্য হিসেবে জাকিরকে এই সমস্যার সমাধান বের করতেই হবে। আর দ্বিতীয় ইনিংসের পাশাপাশি প্রথম ইনিংসেও যদি এই বাঁহাতি বড় ইনিংস খেলা শিখে যেতে পারেন, তবে বাংলাদেশ পাবে একজন আদর্শ টেস্ট ওপেনার।