১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবার

জীবন ছিল যার ‘ওয়ান ফ্রেম সিনেমা’

- Advertisement -

জীবন সেলুলয়েডে ভেসে আসা কোনো গল্প নয়, তবে মাঝেমধ্যে এই জীবনই আবার ছাড়িয়ে যায় সব গল্প, উপন্যাস, রূপকথা। স্টিভেন স্পিলবার্গের চলচ্চিত্র ‘শিল্ডার্স লিস্ট’-এর প্রথম অর্ধেক দেখলে যেকেউই সিনেমার প্রধান চরিত্র অস্কার শিন্ডলারকে নাৎসি বাহিনীর একজন হিসেবে ভেবে নিতে বাধ্য। তবে গল্পের দ্বিতীয় অংশে সেই অস্কার শিন্ডলার-ই হয়ে ওঠেন নায়ক, গল্পের শেষটা তাই স্বাভাবিকভাবেই স্বস্তির।

ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে বোলিং করছেন হ্যারন্ড লারউড

সবার জীবনের গল্পের সমাপ্তি বৃষ্টি পরবর্তী স্বচ্ছ আকাশের মতো সুন্দর হয় না, সবাই অস্কার শিন্ডলারের মতো প্রস্থানের পরেও নায়ক হয়ে পৃথিবীতে বিরাজ করতে পারেন না। প্রয়াত ইংলিশ পেসার হ্যারন্ড লারউড ছিলেন তেমনই একজন। তার গতি সামনেই ছত্রখান হয়ে পড়েছিল ব্রাডম্যানের অস্ট্রেলিয়া, ইতিহাসে যে লড়াই ‘বডিলাইন সিরিজ’ হিসেবেই পরিচিত। কিন্তু বাহবা-তো দূরে, বোলিং-এ লেগ থিওরি প্রয়োগের জন্য পরবর্তীতে ক্রিকেটই ছেড়ে দিতে হয় লারউডকে। অথচ এই লেগ-থিওরি বা শরীর বরাবর বোলিং-এর নীলনকশার প্রধান কারিগর ছিলেন তৎকালীন এমসিসি (ইংল্যান্ড) অধিনায়ক ডগলাস জার্ডিন। তবে জার্ডিন নয়, ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছিল নটিংহ্যামশায়ারে জন্ম নেয়া এই পেসারকে, তিনি চাননি। ব্যাস, সেখানে শেষ তার ক্যারিয়ার।

১৯৩৩ সালে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজের পঞ্চম ম্যাচে ৯৮ রানে আউট হন হ্যারন্ড লারউড, ছবি ক্রিকইনফো

জীবনের শেষদিকে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন লারউড। যার বোলিং-এর সামনে ব্রাডম্যান- কিপ্যাক্সদের অস্ট্রেলিয়া হয়ে পড়েছিল অসহায়, সেই মানুষটাই পরবর্তীতে অন্ধকারে খুঁজেছেন হারানো নিজেকে। জীবনের এমন উত্থান-পতন-পরিবর্তনকে ‘ওয়ান ফ্রেমের সিনেমা’ও বলা যায়। আক্ষেপ নিয়ে জীবনের শেষটা লারউড কাটিয়ে দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ায়। যেখানে জার্ডিনের প্রতি তার অভিমানও ছিল সমান।

লারউড নেই, তবে বডিলাইন বোলিং এখনও আছে। যেই বোলিং টেকনিকের জন্য তাকে খুনি আখ্যায়িত করা হয়েছিল, পরিবর্তীতে সেই বোলিংকেই বলা হয়েছে শিল্প। ক্যারিবিয়ানদের স্বর্ণালী যুগের পেসাররা-তো এখনও মানুষের নস্টালজিয়ার কারণ, অথচ লারউড! জীবনের শেষটা অন্ধাকারে কাটিয়ে আপন করে নিয়েছেন চিরস্থায়ী অন্ধকার।

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -

সর্বশেষ

- Advertisement -
- Advertisement -spot_img