ভ্যাসবার্ট ড্রেকসকে এই প্রজন্মের ক্রিকেটপ্রেমিদের খুব একটা না চেনারই কথা। ২০০২ সালে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে বাংলাদেশ সফরে এসে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন এই বারবাডোজের ফাস্ট বোলার। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রতিটিতেই নিয়েছিলেন ৪ উইকেট করে। গড়েছিলেন তিন ম্যাচ সিরিজে সর্বোচ্চ (১২) উইকেট শিকারের রেকর্ড; যা পরে ভেঙ্গেছেন বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর রহমান।
ভ্যাসবার্টকে না চিনলেও কাল রাতের পর তাঁর ছেলে ডোমিনিক ড্রেকসকে সবাই চিনে গেছেন একথা বলাই বাহুল্য। তাঁর বীরত্বেই যে বুধবার এক রুদ্ধশ্বাস নাটকীয় ম্যাচের শেষ বলে সেন্ট লুসিয়া কিংসকে ৭ উইকেটে হারিয়ে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল) চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস প্যাট্রিয়টস! সিপিএলে এটিই প্যাট্রিয়টসদের প্রথম শিরোপা; যা জেতানোর পথে ডোমিনিক ড্রেকস খেলেছেন ২৪ বলে ৪৮ রানের এক অনবদ্য ঝড়ো ইনিংস।
Apologies for flooding your TL with Dominic Drakes but this is the man of the moment pic.twitter.com/vW6oM9Uywf
— Carlos Brathwaite (@TridentSportsX) September 15, 2021
ওয়ার্নার পার্ক মাঠে টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সেন্ট লুসিয়া কিংসের অধিনায়ক আন্দ্রে ফ্লেচার। ওপেনিং জুটিতে ফ্লেচার ও রাখিম কর্নওয়াল ভালো শুরু এনে দিলেও সেটি ধরে রাখতে পারেনি কিংসের বাকি ব্যাটসম্যানরা। পাওয়ারপ্লেতেই তারা হারায় অধিনায়ক ফ্লেচার ও আগের ম্যাচে ৭৮ রান করা মার্ক ডেয়ালকে। প্যাট্রিয়টসের ফাওয়াদ আহমেদ-নাসিম শাহদের পেস ও ফাবিয়ান অ্যালেনের কিপটে বোলিংয়ে এরপর ঠিকঠাক জুটিই গড়তে পারেনি কিংস ব্যাটসম্যানরা। শেষদিকে কিমো পলের ২১ বলে ৩৯ রানের ক্যামিওটা না হলে হয়ত ইনিংস শেষে ১৫৯ রান জমা হত না কিংসের। কুঁচকির ইনজুরিতে দুই ম্যাচ আগেই টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে যাওয়া নিজেদের সেরা ব্যাটসম্যান ফাফ ডুপ্লেসির অভাবটা নিশ্চয়ই প্রবলভাবেই বোধ করেছিল তারা।
১৬০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে অবশ্য প্যাট্রিয়টসের শুরুটাও ভালো হয়নি। রোস্টন চেসের দারুণ ডেলিভারিতে কোন রান না করেই ফিরে যান ক্রিস গেইল। ২৬ রানে আরেকজন ওপেনার এভিন লুইসকেও হারায় তারা। এরপর জশুয়া ডি’সিলভা ও শেরফান রাদারফোর্ডের জুটি এগিয়ে নিতে থাকেন দলকে। তৃতীয় উইকেট জুটিতে এই দু’জন যোগ করে ৪৫ রান।
তবে পরপর দুই ওভারে এদের দুজনকেই হারিয়ে আবারো চাপে পড়ে যায় প্যাট্রিয়টস। ৫০০তম ম্যাচ খেলতে নামা ডোয়েইন ব্রাভোও তেমন কিছু না করেই ফেরত যান। ৯৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল প্যাট্রিয়টস। কিন্তু এরপরেই শুরু হয় ‘ ডোমিনিক ড্রেকস শো’।
বাবার মত নিজেও আদতে পেসার হলেও ব্যাট হাতে নিজের সামর্থ্য দেখানোর জন্য এই দিনটিকেই বেছে নিলেন ড্রেকস। ফাবিয়ান অ্যালেনকে একপাশে রেখে ছুটাতে থাকেন চার ছক্কার বন্যা। ১৯তম ওভারের প্রথম বলে ফাবিয়ান অ্যালেনকে তুলে নিয়ে যে প্যাট্রিয়টসের আকাশে সামান্য শঙ্কার মেঘ জমিয়েছিলেন ওয়াহাব রিয়াজ, পরের বলেই বিশাল ছক্কা মেরে তা উড়িয়ে দেন ড্রেকস।
শেষ তিন বলে জয়ের জন্য প্যাট্রিয়টসের লাগতো ৭ রান। প্রথম দুইবলেই ৬ রান নিয়ে নেন ড্রেকস। এরপর শেষ বলে ১ রান নিয়ে জয়ের বন্দরে ভেড়ান দলকে।
ম্যাচসেরা হয়েছেন ড্রেকস। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন রোস্টন চেস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
সেন্ট লুসিয়া কিংস: ২০ ওভারে ১৫৯/৭ (ফ্লেচার ১১, কর্নওয়াল ৪৩, ডেয়াল ১, চেস ৪৩, ভিসা ২, ডেভিড ১০, পল ৩৯, ওয়াহাব ২*, রয়েল ০*; কটরেল ১-০-১২-০, অ্যালেন ৪-০-১৭-১, ফাওয়াদ ৪-০-৩২-২, নাসিম ৪-১-২৬-২, ড্রেকস ৩-০-৩৮-১, জাগেসার ৪-০-৩৪-১)
সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস প্যাট্রয়টস: ২০ ওভারে ১৬০/৭ (গেইল ০, লুইস ৬, জশুয়া ৩৭, রাদারফোর্ড ২৫, ব্রাভো ৮, ড্রেকস ৪৮*, অ্যালেন ২০, কটরেল ৫, নাসিম ১*; চেস ৩-০-১৭-১, ওয়াহাব ৪-০-৩৬-২, জোসেফ ৩-০-২২-১, ভিসা ৩-০-২৭-১, রয়েল ২-০-১৯-০, ডেয়াল ১-০-৮-০, উইলিয়ামস ৪-০-২৯-১)