পুনেতে ২০১৭ সালে যেদিন শুরু করেছিলেন অধিনায়কত্বের সফর, সেদিন কি ভিরাট কোহলি ভেবেছিলেন সেখানেই এসে হবে থামতে? নিয়তি বড় অদ্ভুত, কখনো কখনো এমন খেল খেলে পৃথিবীর সেরা খেলোয়াড়টারও হার মেনে নেওয়া ছাড়া করার থাকে না কিছুই। কোহলিরও কিছু করার ছিল না;হারতে হয়েছে, হারাতে হয়েছে সাজানো সাম্রাজ্যটাকে।
ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! পুনেতে প্রথমবার ওয়ানডেতে যখন অধিনায়কত্ব করেন, তখন প্রতিপক্ষ ছিল ইংল্যান্ড; শেষবারেও ইংলিশরাই। ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’ একবার তাদের প্রতিবেদনে লিখেছিল বিসিসিআইয়ের চেয়েও ক্ষমতাধর নাকি ভিরাট কোহলি। সেই বিসিসিআই-ই কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে দেখিয়ে দিয়েছে তাদের ক্ষমতা, কেড়ে নিয়েছে কোহলির অধিনায়কত্ব।
Virat Kohli played the same opposition at the same venue in his first and last ODI as regular skipper ✨
Full circle 🔄 pic.twitter.com/so02yqqALz
— ESPNcricinfo (@ESPNcricinfo) December 10, 2021
গুঞ্জন আছে, কোহলিকে নাকি ওয়ানডে অধিনায়কের পদ থেকে সরে দাড়ানোর জন্য ৪৮ ঘন্টা সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। তিনি সরে দাড়াননি, তার তো সরে দাড়ানোর ইচ্ছেই ছিল না। অধিনায়ক হিসেবে ৯৫ ম্যাচের ৬৫টিতেই জয়; ব্যক্তিগত ২১টি শতক, ৭৩ গড়! এমন অতিমানবীয় পারফরম্যান্স যার, সে সরেই বা দাড়াতে চাইবে কেন!
ওয়ানডেতে সবচেয়ে দ্রততম সময়ে আট, নয়, দশ, এগারো এবং বারো হাজার রান, সবই তো এসেছে ঐ অধিনায়ক হিসেবে থাকাকালীন সময়েই। কোনো সন্দেহ ছাড়াই পরিসংখ্যান বিবেচনায় ওয়ানডেতে ভারতের সেরা অধিনায়ক তিনি, শুধু নেই নামের পাশে বিশ্বকাপের ট্রফিটাই! কিন্তু, তাতে কি কোহলির অধিনায়কত্বটাকে যাচ্ছেতাই বলা যায়? নাহলে হঠাৎ করেই কেনো তাকে সরিয়ে দেয়া!
“বিসিসিআই কোহলিকে টি–টোয়েন্টির নেতৃত্ব থেকে সরে না দাঁড়ানোর অনুরোধ করেছিল। কিন্তু সে বিসিসিআইয়ের কথা শোনেনি। নির্বাচকদের মনে হয়েছে সাদা বলের ক্রিকেটে ভিন্ন দুজন অধিনায়ক রাখার প্রয়োজন নেই।”- সৌরভ গাঙ্গুলি, বিসিসিআই সভাপতি
'Bottom line – there can't be two white-ball captains'
➡️ https://t.co/AhCJU0FZBe pic.twitter.com/muItUc1JiD
— ESPNcricinfo (@ESPNcricinfo) December 9, 2021
সৌরভ গাঙ্গুলির মতে, সাদা বলের ক্রিকেটে দুজন অধিনায়ক রাখতে চায় না বিসিসিআই। ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা থেকে নাকি অনুরোধও করা হয়েছিল কোহলিকে, টি-টোয়েন্টি দলের দায়িত্ব থেকে সরে না দাড়াতে। কোহলি কথা শোনেননি, প্রতিশোধটা মধুর করেই নিয়েছে বিসিসিআইও। কিন্তু, এতে কতোটুকু লাভ হবে ভারতীয় ক্রিকেটের? আদৌ কি কোনো লাভ হবে?
“আমি বুঝতে পারছি না কোহলিকে কেনো সরিয়ে দেয়া হলো! নির্বাচকেরা ভাবলও বা কি করে! যদি ধারাবাহিকভাবে জয় আসে, তাহলে তো পরিবর্তনের কথাই ভাবা উচিত না। কোহলির জন্য খারাপ লাগছে। যখন আপনি সফল তারপরেও আপনাকে সরিয়ে দেয়া হবে, তখন সেটা আপনার আত্মবিশ্বাসে ধাক্কা দেবে। একটা দল তৈরী করা অনেক কঠিন, কিন্তু ধ্বংস করাটা ততোটাই সহজ।”- মোদন লাল, সাবেক ভারত কোচ
কোহলির মনে কি চলছে সেটা তার চেয়ে ভালো আর কেউই জানেন না। তবে, মোদন লালের ভয়টা যে এইমুহুর্তে ভারতীয় সমর্থকদের মনেও ঘুরপাক খাচ্ছে সেটা অনুমান করাই যায়।
Virat Kohli when he announced his decision to step down as India's T20I captain in September 👀
— ESPNcricinfo (@ESPNcricinfo) December 9, 2021
প্রায় দুই দশক আগে একইরকম অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল শচীন টেন্ডুলকারকেও। অধিনায়ক হিসেবে ততোটাও সফল ছিলেন না ভারতীয় কিংবদন্তি, কিন্তু তাকে না জানিয়েই সরিয়ে দেয়াটা মেনে নিতে পারছিলেন না কিছুতেই। পরবর্তীতে টেন্ডুলকার নিজেই বলেছিলেন সে কথা।
“আমাকে অধিনায়কের পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে বিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে কেউই জানায়নি। সংবাদমাধ্যমকর্মীদের থেকে প্রথম শুনি এবং আমি ভেঙ্গে পড়ি।”- শচীন টেন্ডুলকার
কিন্তু, শচীন সেখানেই থামেননি। এরপরেও খেলে গেছেন দীর্ঘ বারো বছর। একের পর এক রেকর্ড গড়েছেন, ভেঙ্গেছেন। নিজেকে পরিণত করেছেন ক্রিকেটের ‘ঈশ্বর’ রুপে। ক্রিকেট ক্যারিয়ারে যা করেছেন তা চিরকাল টিকে থাকবে ‘শচীন রুপকথা’ হয়েই। বলা হয়ে থাকে, শচীনের কাছাকাছি এই প্রজন্মের কেউ যদি পৌঁছাতে পারে, সে নাকি ভিরাট কোহলি। কিন্তু, কোহলি পারবেন তো দাঁতে দাঁত চেপে এগিয়ে যেতে?
পুরো কক্ষ জুড়ে অন্ধকার। ভেতরে বন্দী কোহলি, আলো খুঁজে পাওয়ার চেষ্টায়। দেয়ালে মাথাটা দিয়ে ঢুস মারতে মারতে, হাত দিয়ে ঘুষি মারতে মারতেই একদিন হঠাৎ করে দেয়ালটা ফুঁটো হয়ে যাবে নিশ্চিত। আর, সেদিন উঁকি দিবে দিগন্ত, আলো ফিরে আসবে কক্ষে। কোহলিকে নিয়ে এমন রুপকথা তো লেখাই যায়। ক্যারিয়ারে যা করেছেন তাও বা রুপকথার চেয়ে কোন অংশে কম!