১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, শনিবার

‘পাপন, পাপন’ করে আর কত দিন!

- Advertisement -

জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া এবং জাতীয় দলের পাইপলাইনে থাকা খেলোয়াড়দের প্রস্তুতি যাতে ঠিকমতো হয়, সেজন্য ‘বাংলা টাইগার্স’ নামের একটা দল তৈরীর ঘোষণা দিয়েছিলেন বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। ঘোষণা দেয়ার প্রায় ছ’মাস পেরোলেও বাস্তবায়ন হয়নি পরিকল্পনার। ‘বাংলা টাইগার্স’ নামে কোনো দল তো দূরে থাকুক, ‘এ’ দলেরও কোনো কার্যক্রম নেই চলমান। শুধুই কি ‘বাংলা টাইগার্স’ আর ‘এ’ দল! আরও কতশত পরিকল্পনারই হয়নি বাস্তবায়ন!  এসবের জন্য দায়টা আসলে কার? শুধুই কি বিসিবি সভাপতির? নাকি দৃশ্যের আড়ালে লুকিয়ে আছে অন্য কোনো গল্প?

বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভক্ত-সমর্থক হিসেবে আপনি পাপনকে দোষ দিতেই পারেন। কিন্তু, আবেগকে দূরে সরিয়ে রেখে একবার বিবেক দিয়ে বিচার করে দেখেন তো এই মানুষটা আসলেই এতটাও দায়ী কি না? যতটা প্রতিনিয়ত তাকে করা হয়! বাংলাদেশ দল যখনই বিপর্যয়ে পরেছে প্রতিবারই তাকেই আসতে হয়েছে সকলের সামনে। না আসলেও ক্যামেরার লেন্স ঠিকই খুঁজে নিয়েছে বোর্ড সভাপতিকে। কখনো কখনো বলির পাঠা হয়েছেন আরও একজন। তিনি আর কেউ নন, তিনি ‘খালেদ মাহমুদ সুজন’।

ওরা এখন কে কোথায়, জানেন কি?

সুজন এবং পাপন দুজনকেই প্রতিনিয়ত মাঠে দেখা যায়; খালেদ মাহমুদ সুজন তো টাইগারদের সাথে মাঠেই পার করেন সারাটা দিন। বিসিবিতে তো আরও পরিচালক আছেন, তারা কয়জন মাঠে আসেন বলতে পারবেন? পারবেন না; অনেক ভেবে একটি দুটি নামও না। বিসিবি সভাপতি দেখেই পাপন চাইলেই সব বদলে দিতে পারবেন এমনটা আমাদের অনেকেরই ধারণা। আসলেই কি তাই? কোনো কিছু বাস্তবায়ন করতে হলে ভোট তো পেতে লাগে বিসিবির বাকি পরিচালকদেরও। তাহলে কি তারাই চান না বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নয়ন হোক? নাকি বিসিবি সভাপতি প্রস্তাবই তুলেন না আলোচনায়? চলুন উত্তর খোঁজা যাক বাংলাদেশ ক্রিকেটেরই সেরা অধিনায়কদের একজন মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার কিছু কথায়।

“আমার কাছে মনে হয়, এক্ষেত্রে পাপন ভাই তো চেয়েছেন। তাহলে হয়নি কেন? এখানে আমি যতোটুকু জানি যে, কেউ না কেউ এটাতে রাজি হয়নি। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগে তো একটা ঘোষনার দরকার আছে। বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনার ব্যাপার আছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ যারা পক্ষে থাকে, তখন এই জিনিসটার বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়। তো, বোর্ড মিটিংয়ের পরে এগুলো (ভালো উদ্যোগগুলো) সংখ্যাগরিষ্ঠ হয় না। কেনো হয় না তা আসলে আমি জানিনা। বোর্ড মিটিংয়ে তো আমি থাকি না। কে বা কারা এইসবে বাঁধা দেয়, তারা ডিরেক্টরশীপে থাকে কিভাবে সেটাও আমার প্রশ্ন। আমি মনে করি, পাপন ভাইয়ের এদিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।”

খেলোয়াড়দের সাথে পাপন, এমন দৃশ্য তো অসংখ্য আছে বাংলাদেশ ক্রিকেটে। পাপন ছাড়া আর কয়জনের আছে?

মাশরাফীর কথাতে এতোটুকুতো স্পষ্ট যে বোর্ড সভাপতি একা দায়ী নন। কেউ তো আছেন যে বা যারা চান না এই পরিকল্পনাগুলোর বাস্তবায়ন হোক। মাশরাফী দিয়েছেন ইঙ্গিত, “যে পরিকল্পনা করেছিল সে আমাকে একদিন বলেছিল, ‘এরকম একটা প্ল্যান করেছি। ওরা বাঁধা দিচ্ছে।’ তো, সেই ওরা কারা? আমি জানি, কিন্তু অন মাইক তো আমি তা বলবো না। আমাকে উনি বলেছে, কিন্তু উনার কথার ভিত্তিতেই তো আমি একজনের নাম প্রকাশ করে দিতে পারি না। কিন্তু, ক্রিকেট বোর্ড জানে এই বাঁধাগুলো কারা। এই বাঁধাগুলোই তো ভাই সমস্যা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য। এবং, এরা কিভাবে ক্রিকেট বোর্ডে আসে?”

বাংলাদেশ ক্রিকেট যখনই বিপর্যয়ে, তখনই আবির্ভাব হয়েছে সুজনের। বাকিরা কোথায়?

ম্যাশের কথায় একটু গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করে দেখা গেলে কিছুটা আভাস পাওয়া যাবে কারা হতে পারেন সেই বোর্ড পরিচালকেরা, “পাপন ভাই সংসদ সদস্য, উনি নিজের এলাকায় যেতে পারেননা, এখানে সময় দেন বলে। উনি চাকরিও করেন। সুজন ভাই সারাদিন মাঠে পড়ে থাকেন। বাকি কয়জন ডিরেক্টর অফিস করছে বা রেগুলার ক্রিকেটে সময় দিচ্ছে আমাকে বলেন?” এই বাকি ডিরেক্টরদের নাম খুঁজতে গেলে যেই নামগুলো আপনার চোখে ভাসে সেগুলোকেও মনে রাখুন। শুধু ‘পাপন পাপন’ নয়, আঙ্গুল তুলতে হলে তাদের দিকেও তুলুন।

সব তো নাহয় বোঝা গেল, কিন্তু এসব থেকে নিস্তার পাওয়ার উপায় কি? কোনো উপায় কি আছে আদৌ? কোনো উপায় আছে কি না সেই প্রসঙ্গ তোলা থাকুক পরবর্তী সময়ের জন্য। কিন্তু, মাশরাফী কি চান সেটা তো জেনে আসাই যেতে পারে, “আমি মনে করি, পাপন ভাইয়ের এদিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। উনার সিদ্ধান্তকে না বলতেছে এরা কারা? এরা তো বাংলাদেশ ক্রিকেটের কখনোই ভালো কিছু না। এবং, একটা সঠিক সিদ্ধান্তকে ব্যহত করছে। আমি মনে করি পাপন ভাইয়ের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করে এদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। কারণ এত এত ভালো উদ্যোগকে সফল হতে না দিলে আমি মনে করি এখানে পাপন ভাইয়ের পাশে আমাদের সকলের দাড়ানো উচিত।”

জানুয়ারিতে বিশ্বকাপ; এরপর ওদের হবে কি? কোনো পরিকল্পনা আছে কি?

সত্য তো এটাই। পাপনের দিকে আঙ্গুল নয়, সবার আগে আমাদের উচিত পাপনের পাশে দাড়ানো। সন্তানরা ভুল পথে গেলে চিন্তাতো সবচেয়ে বেশী অভিভাবকদেরই হয়। বাবা-মায়েদের কার্যপদ্ধতি আমাদের ভাবনার সাথে নাও মিলতে পারে, কিন্তু তারা তো অন্তত আমাদের খারাপ চাইতে পারেন না। তাহলে কি করে ভাবি বাংলাদেশ ক্রিকেটের যিনি সবচেয়ে বড় অভিভাবক, তিনি ক্রিকেটের উন্নতি চাইবেন না? টাইগাররা ভালো করলে তো সবচেয়ে বেশী খুশি সেই মানুষটারই হওয়ার কথা।  তবে হ্যা, পরিবারে তো আরও অসংখ্য সদস্য থাকে। সবাই নিশ্চয়ই আমাদের ভালো চাইবেন না। সবাই নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশ ক্রিকেটেরও উন্নতি চাইবেন না। সেইসব সদস্যগুলোকে পেছনে ফেলে টাইগাররা এগিয়ে চলুক দুর্বার গতিতে। দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল অনেক ভালো…

 

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -

সর্বশেষ

- Advertisement -
- Advertisement -spot_img