১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, শনিবার

‘পয়সা উসুল’ ম্যাচে লিভারপুলের জয়

- Advertisement -

“কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান”- লিভারপুল বনাম এসি মিলান ম্যাচটি সম্পর্কে একবাক্যে এরচেয়ে ভালো ব্যাখ্যা বুঝি আর হয়না। ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে প্রথমার্ধে পিছিয়ে পড়েও দ্বিতীয়ার্ধে ফিরে এসে লিভারপুল ৩-২ গোলে হারিয়েছে এসি মিলানকে। দারুণ জমজমাট এক ফুটবলীয় লড়াইয়ের সাক্ষী হয়েছে অ্যানফিল্ডের দর্শক।

ইনজুরির কারণে এসি মিলানের আক্রমণভাগে ছিলেন না জলাতান ইব্রাহিমোভিচ। লিভারপুলও এই ম্যাচে মাঠে নেমেছিল আক্রমণভাগের নিয়মিত সেনানী রবার্তো ফিরমিনোকে ছাড়া। আরো দুজন নিয়মিত মুখ সাদিও মানে ও ভার্জিল ফন ডাইক ছিলেন বেঞ্চে। মোহাম্মদ সালাহ ও ডিওগো জোতার সাথে আক্রমণভাগে সুযোগ পেয়েছিলেন ডিভোক অরিগি; ডিফেন্সে জোয়েল মাতিপের সাথে জুটি বেঁধেছিলেন জোসেফ গোমেজ।

ঘরের মাঠ অ্যানফিল্ডে ম্যাচের শুরু থেকেই মিলানের ওপর গোলাবর্ষণ করতে থাকে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল।  প্রথম ৭ মিনিটেই তিন-তিনবার মিলানের গোলমুখে শট নেয় লিভারপুল। অল্পের জন্য গোল মিস করেন হেন্ডারসন আর জোয়েল মাতিপ। তবে ৮ মিনিটেই কাঙ্ক্ষিত গোলটি পেয়ে যায় লিভারপুল, ডানপ্রান্ত থেকে মোহাম্মদ সালাহ পাস দেন ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার-আর্নল্ডকে। বুলেটের গতিতে ডি বক্সে কাট ইন করে শট নেন আলেক্সান্ডার আর্নল্ড। মিলান ডিফেন্ডার ফিকায়ো তোমোরির পায়ে লেগে জালে ঢুকে যায় বল। আত্মঘাতী গোলে ১-০ তে এগিয়ে যায় লিভারপুল।

প্রথম আঘাত হানেন ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার-আর্নল্ড

তাঁর কিছুক্ষণ পরই ব্যবধান দ্বিগুন করারও সুযোগ পেয়েছিল লিভারপুল।  ইসমাইল বেনাসেরের হ্যান্ডবলে পেনাল্টি পায় তারা। তবে অসাধারণ দক্ষতায় মোহাম্মদ সালাহর পেনাল্টি ঠেকিয়ে দেন মিলান গোলরক্ষক মাইক মেনিয়ান; প্রায় সাথে সাথেই ছিটকে আসা বলে ডিওগো জোতার হেডারটিও প্রতিহত করেন ২৬ বছর বয়সী এই ফ্রেঞ্চ গোলরক্ষক।

পেনাল্টি ঠেকিয়ে দেন মিলান গোলরক্ষক মাইক মেনিয়ান

পেনাল্টি ঠেকানোর পরও মিলান মাঠের খেলায় পেরে উঠছিলোনা লিভারপুলের ‘গেগেনপ্রেসিং’ ফুটবলের সামনে। সালাহ-জোতা-কেইতাদের মুহুর্মুহু আক্রমণে মিলানকে মনে হচ্ছিল দিকভ্রান্ত এক জাহাজ। তবে হঠাৎই পাশার দান পালটে যায় রাফায়েল লিয়াওয়ের চমৎকার একটি এসিস্টে আন্তে রেবিচের দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে। ক্রোয়েশিয়ান স্ট্রাইকারের গোলে ৪২ মিনিটে খেলায় আসে ১-১ সমতা।

Image
আন্তে রেবিচের গোলে সমতায় ফেরে মিলান

অতিরিক্ত হাই ডিফেন্স লাইনই কাল হয় ইয়ুর্গেন ক্লপের দলের জন্য। সমতাসূচক গোলটির প্রায় সাথে সাথেই আরেকটি গোল পেয়ে যায় মিলান। লিভারপুলের ডিফেন্সের ফাঁকফোকর দিয়ে লিয়াও ও রেবিচের সাথে অসাধারণ পাসিং ফুটবলের পসরা সাজিয়ে থিও হার্নান্দেজ ডি বক্সে গিয়ে গোলে শট নেন। শরীর দিয়ে বল ঠেকিয়েও শেষরক্ষা করতে পারেননি লিভারপুলের অ্যান্ডি রবার্টসন। টোকা দিয়ে ফিরতি বলটি জালে পাঠিয়ে হাফ টাইমের ঠিক আগে মিলানকে ২-১ গোলের লিড এনে দেন ব্রাহিম দিয়াজ।

ব্রাহিম দিয়াজের গোলে প্রথমার্ধ শেষে ২-১ গোলে এগিয়ে যায় মিলান

তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ফিরে আসে লিভারপুল, ৪৮ মিনিট ডিভোক অরিগির এসিস্টে মোহাম্মদ সালাহ ২-২ সমতা বিধান করেন। ৬৯ মিনিটে লিভারপুল অধিনায়ক জর্ডান হেন্ডারসনের দূরপাল্লার শট ব্যবধান বাড়িয়ে ৩-২ করে।

ম্যাচজয়ী গোলের পর হেন্ডারসন

অনেক চেষ্টা করেও আরেকটি গোল করতে পারেনি এসি মিলান। গোল অবশ্য করতে পারেনি লিভারপুলও। এর কারণ নিজেদের খামখেয়ালি যেমন, ঠিক তেমনই মিলানের গোলরক্ষক মাইক মেনিয়ানের অবদানও কম নয়। মিলানের আক্রমণভাগের চেয়েও এই ম্যাচে গোলবারের নিচে মেনিয়ান কেড়ে নিয়েছেন অনেকটুকু আলো। ম্যাচে পেনাল্টিসহ ৭টি সেভ করেছেন এই ফ্রেঞ্চ গোলরক্ষক।

ভরপুর উত্তেজনাপূর্ণ এই ম্যাচে শেষ হাসিটা লিভারপুল হেসেছে বটে, তবে শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছে এসি মিলান। সব মিলিয়ে দুই দলের আক্রমনাত্বক সুন্দর ফুটবলে ভরেছে ফুটবল-রোমান্টিকদের মন। সব মিলিয়ে ‘পয়সা উসুল’ যাকে  বলে।

 

 

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -

সর্বশেষ

- Advertisement -
- Advertisement -spot_img