কলকাতা নাইট রাইডার্সের প্লে-অফে পৌছানো নিয়েও ছিল সংশয়। সেই কলকাতাই এখন ফাইনালে; প্রতিপক্ষ চেন্নাই সুপার কিংস। ইতিহাস নাকি বারে বারে ফিরে আসে! চেন্নাইয়ের বিপক্ষে কলকাতার ফাইনাল ম্যাচটি তাই মনে করিয়ে দিচ্ছে ২০১২ আইপিএলের কথা। সেবারও দিল্লীকে হারিয়েই ফাইনালে পৌছেছিল কেকেআর; পার্থক্যটা শুধু ম্যাচে। এবারেরটা দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচ, ২০১২ তে ছিল প্রথম কোয়ালিফায়ার। মিল আছে আরো একটি জায়গায়; দুই আসরেই যে কলকাতার দলে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান!
বুধবার দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করে সাকিবের দল। নিজের চার ওভারে ২৮ রান দিলেও সাকিব ছিলেন উইকেটশূন্য; তবে লুফে নিয়েছেন দুর্দান্ত এক ক্যাচ। আগের ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং করা সুনীল নারিনও ৪ ওভারে ২৭ রান দিয়ে পাননি উইকেটের দেখা। তবে, আরেক স্পিনার বরুণ চক্রবর্তী পেয়েছেন ২টি উইকেট। নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে দিল্লীর সংগ্রহটাও তাই মাত্র ১৩৫; সর্বোচ্চ ৩৬ রান শিখর ধাওয়ানের, শ্রেয়াস আইয়ার অপরাজিত ছিলেন ৩০ রানে।
১৩৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটাই বাউন্ডারী দিয়ে করেছেন শুভমন গিল। কথায় আছে, দিনের শুরুটাই নাকি বলে দেয় সারাদিনটা কেমন যাবে, কলকাতার ক্ষেত্রেও হয়েছে তাই। পাওয়ারপ্লের পুরোটা জুড়েই শুরুর ছন্দটা ধরে রেখেছেন দুই ওপেনার ভেঙ্কটেশ আইয়ার-শুভমন গিল। ৬ ওভার শেষে স্কোরবোর্ডে রানটাও তাই বিনা উইকেটে ৫১! নিজের অর্ধশতক তুলে নিতে ভুলেননি আইয়ার; দলীয় ৯৬ রানে প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে খেলেছেন ৫৫ রানের ঝলমলে এক ইনিংস।
আইয়ারের পর ব্যক্তিগত ১৩ রানে নীতিশ রানাও ফিরে যান প্যাভিলিয়নে। ১৭ এবং ১৮তম ওভারে মাত্র তিন রানে দুই উইকেট হারায় কেকেআর। ৪৬ রান করে গিল প্যাভিলিয়নে ফিরার পর, শূন্য রানেই প্যাভিলিয়নে ফিরেন দীনেশ কার্তিকও। ২৪ বলে ১৩ রানের ম্যাচে সমীকরণটা হঠাৎ করেই দাড়ায় ১২ বলে ১০! আনরিক নরকিয়ার করা ১৯তম ওভারে কেকেআর তুলতে পারলো মোটেই তিন রান; শেষ বলে টানা দুই বল ডট করার পর শূন্য রানেই বোল্ড অধিনায়ক মরগানও।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ৬ বলে ৭ রান; বোলিংয়ে রবীচন্দ্রন অশ্বিন, ব্যাটিংয়ে ত্রিপাঠি-সাকিব। প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে সাকিবকে স্ট্রাইক দিলেন ত্রিপাঠি। পরের বল থেকে সাকিব নিতে পারলেন না একটা রানও; তৃতীয় বলেই আউট। চতুর্থ বলে ব্যাটিংয়ে সুনীল নারিন; এগিয়ে এসে মারলেন সজোরে। বলটা তখন আকাশে, ভক্ত সমর্থক সবার হাতজোড়া প্রার্থনায়। কিন্তু, নারিনের বলটা পেরোলো না বাউন্ডারী লাইন; অক্ষর প্যাটেলের হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ক্যারিবিয়ান তারকাও। টানা চার ব্যাটসম্যান কোনো রান না করেই ড্রেসিং রুমে! পঞ্চম বলটা একটু শর্টে করলেন অশ্বিন; এবং, বোলারের মাথার ওপর দিয়ে ত্রিপাঠির ছক্কা। সেইসাথে উল্লাসে মেতে ওঠে কেকেআর শিবির; তিন উইকেটের জয়ে ফাইনালে কলকাতা।
দিল্লীর বিপক্ষে ম্যাচের দিনটা সাদামাটা কাঁটলেও সাকিব বোধহয় খুশিই হবেন ফাইনাল অব্দি দলকে নিয়ে যেতে পেরে। আইপিএলে কলকাতার দুইটি ট্রফিও এসেছে সাকিবের হাত ধরেই; তৃতীয়টাও যে আসবে না সেটাই বা নিশ্চিত করে বলতে পারবে কে! সাকিবের হাতে বিশ্বকাপ টি-টোয়েন্টির আগে ট্রফিটা উঠলে তো বাংলাদেশেরই লাভ। নিজ দলের কেউ শিরোপা জিতেছে, সেটা তো আত্মবিশ্বাস জোগানোর কথা বাকি সতীর্থদেরও।