২৭ জুলাই ২০২৪, শনিবার

বিজয় তোমাদের হবেই

- Advertisement -

স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে ড্রেসিংরুমে টাইগাররা। অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের বিধ্বস্ত নীলিমার মতো মুখটার দিকে তাকানো যাচ্ছে না। আক্ষেপের অনলে যেন জ্বলে-পুড়ে যাচ্ছেন সাকিব আল হাসান; আবেগী মুশফিকুর রহিমের চোখে জল! এ তো গেল তিন সিনিয়রের গল্প; আফিফ হোসেন-তাসকিন আহমেদরা তো ভেঙ্গেই পড়েছেন। হোটেলে ফিরে ঘুমোতে পেরেছিলেন কি?

কিছু গল্প চিরদিন দৃশ্যের আড়ালেই থেকে যায়। দেখা না গেলেও স্কটিশদের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে টাইগারদের ড্রেসিং রুমের গল্পটা তো এরকমই হওয়ার কথা! প্রথম ম্যাচেই স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ছয় রানের হার; নিশ্চিতভাবেই অনেক বড় ধাক্কা হয়েই এসেছিল টাইগার শিবিরে। যদি-কিন্তুর হিসেব মেলাতে গেলে হতে পারতো অনেক কিছুই। কিন্তু, দিনশেষে সত্য তো এটাই, ‘পারেনি টাইগাররা’।

প্রথম ম্যাচ হেরে সংবাদ সম্মেলনে রিয়াদ

হেরেছে বাংলাদেশ; সমালোচনাও কম হয়নি। বোর্ড প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন থেকে শুরু করে চায়ের দোকানেও উঠেছে সমালোচনার ঝড়। ভক্ত-সমর্থকেরা ফিরেছেন নিরাশ হয়ে;  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খেলোয়াড়দের সামর্থ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে কথা বলতে গিয়ে স্কটিশদের উল্লাসের তীব্র স্বরে থেমে যেতে হয়েছে টাইগার অধিনায়ককেও; অকপটে স্বীকার করে নিতে হয়েছে নিজেদের ব্যর্থতার কথা।

প্রথম ম্যাচেই হারের শোকটাকে শক্তিতে পরিণত করেছে টাইগাররা; ‘যদি-কিন্তু’র সকল সমীকরণকে পেছনে ফেলে ঠিকই জায়গা করে নিয়েছে সুপার-১২তে । কিন্তু, সবচেয়ে বড় অপ্রিয় সত্যটা হলো, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় পর্বে কখনোই জেতেনি বাংলাদেশ। এবার জিতবে তো?

“স্বপ্ন দিয়ে তৈরী সে দেশ, স্মৃতি দিয়ে ঘেরা..’’

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের লেখা এই লাইনগুলোই যেন এইমুহুর্তে সতেরো কোটি মানুষের প্রতিচ্ছবি। ছোট্ট এই দেশটা তো স্বপ্ন দিয়েই তৈরী, স্বপ্নেই আছে টিকে। স্মৃতিগুলোও চিরকাল থেকে যায় অমলিন হয়েই। টাইগাররা হারলে যতোই গালি দেই না কেনো, সমালোচনা যতোই হোক না কেনো, সব তো ঐ স্বপ্নটা না পূরণের যন্ত্রনাতেই। যে যাই বলুক না কেনো, টাইগাররা ভালো খেলবে পরের রাউন্ডে এই স্বপ্ন যে বুনতে শুরু করেছে অনেকেই, সেটা অনুমান করাই যায়।

জয়ের সামর্থ্য আছে টাইগারদের, অস্বীকার করার নেই কোনো উপায়

জয়ের সামর্থ্য যে সাকিব-মুশফিকদের আছে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহই নেই। শুধু প্রয়োজন আত্মবিশ্বাসটাকে ফিরিয়ে এনে দল হিসেবে খেলে যাওয়া। যদি শুধুমাত্র এক-দুজনের পারফরম্যান্সেই জয় আসতো, তাহলে ২০১৯ বিশ্বকাপে সাকিবের ওমন অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের পরেও অষ্টম হয়েই দেশে ফিরতে হতো না টাইগারদের। সাকিব দুর্দান্ত শুরু করেছেন এই বিশ্বকাপেও; কিন্তু, তাকে যোগ্য সঙ্গটা দিতে পারবেন তো বাকিরা?

স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হারার পর ওমান এবং পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে জেতা ম্যাচগুলোর স্কোরবোর্ডের দিকে তাকালে হয়তো জয়জয়কারটা দেখা যাবে সাকিবেরই। তবে, এবারের গল্পটা কিছুটা আলাদা। নেপথ্যে নায়ক সাকিব হলেও, জয়গুলো এসেছে দলীয় পারফরম্যান্সেই। ওমানের বিপক্ষে নাইমের অনবদ্য ৬৪ রানের ইনিংস, সাইফউদ্দিন-মাহেদির আট ওভারে মাত্র ত্রিশ রান দেয়াটাই যে গড়ে দিয়েছে জয়ের ভিত, সেটাকে হয়তো কখনোই বড় করে দেখা হবে না। পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে অধিনায়কের দ্রুততম অর্ধশতক, আফিফ-সাইফউদ্দিনের ঝড়ো ইনিংস; বল হাতে দুর্দান্ত তাসকিন-মাহেদি-সাইফউদ্দিন, সবকিছুই হয়তো হারিয়ে যাবে সাকিবের অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের আড়ালেই।

টাইগারদের পাশে প্রয়োজন সতেরো কোটি জনতাকেই

কিন্তু, সত্য তো এটাই, দলীয় পারফরম্যান্সেই এসেছে দুই জয়। ছোট ফরম্যাট; তিন চারজনের ভালো পারফরম্যান্সই গড়ে দেয় পার্থক্য। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবাই প্রতিদিন ভালো খেলবে না এটাই তো স্বাভাবিক।  নাইমের প্রথম ম্যাচেই দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পরেও পরের ম্যাচেই শূন্য রানে ফেরাটাও তাই অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে ধারাবাহিকতাটা নিজেকে টিকিয়ে রাখতেও অনেক জরুরী। মুশফিকুর রহিমের ফর্মটা কিছুটা চিন্তার কারণ হতেই পারে, মুস্তাফিজটাও কেমন যেন ছন্নছাড়া। লিটন দাস রানে ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছেন, নুরুল হাসান সোহানও আছেন ঝড়ো ইনিংস খেলার অপেক্ষায়।

সতেরো কোটির বাংলাদেশ, ওরা ১৬ জন পাশে পাচ্ছে ক’জন কে? সমালোচনা হবেই, কিন্তু কখনো কখনো সাপোর্টটাও যে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে, সেটা সকলেই জানে। পরের রাউন্ডে প্রতিদিন যদি ওদের মধ্য হতে কেউ না কেউ পারফর্ম করে, সঙ্গ দিতে পারে সাকিব-মাহেদি-রিয়াদ-আফিফ-সাইফউদ্দিনদের, তাহলে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে প্রথম জয়টা টাইগারদের আসবেই আসবে।

টাইগাররা এগিয়ে চলুক দুর্বার গতিতে। বিশ্ব ক্রিকেট নতুন করে চিনুক টি-টোয়েন্টির নতুন এক পরাশক্তিকে। চলো বাংলাদেশ, বিজয় এবার হবেই তোমার…

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -

সর্বশেষ

- Advertisement -
- Advertisement -spot_img