২৭ জুলাই ২০২৪, শনিবার

মেসির বিদায়টা অন্যভাবেও হতে পারতো

- Advertisement -

আমি ছিলাম তোমাদেরই মাঝে

হেসেছিলাম একসাথে

উড়েছিলাম স্বপ্নীল আকাশে

চাঁদের দেশে যেতে হারিয়ে…

বাংলা ব্যান্ড ‘বে অফ বেঙ্গলের’ ওপারে গানটা যদি লিওনেল মেসি শুনতেন, তাহলে কি নিজের ক্লাব ছাড়ার কথা বার্সেলোনা সতীর্থদের এভাবেই জানাতেন? নাকি নতুন কোন জার্সির অহংকারে ভেসে যাওয়ার প্রতিক্ষায় ক্লাব ছাড়ার জন্য তার মন আনচান করছিল। নাকি ক্লাব ছাড়ার প্রহর গুনছিলেন, মুক্তির অপেক্ষায় থাকা তার বার্সা সত্ত্বাকে সত্যিকারের মুক্তি দিতে চাচ্ছিলেন! কিন্তু তা কী করে হয়? এইতো গত মাসেই অর্ধেক বেতনে থাকতে রাজি হয়েছিলেন ক্লাবে, প্রিয়তম ক্লাবে, নিজের দ্বিতীয় পরিবারে। বার্সেলোনা তো মেসির কাছে দ্বিতীয় ঘরই, সেকথা কে না জানে।

বার্সার আকাশের কত শত রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে মেসি লড়ে গেছেন

মেসি কোন ক্লাবে যাবেন? নতুন কোন চ্যালেঞ্জ মাথা পেতে নিবেন? মেসি কি উপভোগ করবেন সেই চ্যালেঞ্জ, সেখানে কি জিততে পারবেন? ভক্ত-সমর্থকদের মনে কত কত প্রশ্ন! তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, মেসি কি বার্সাকে ভুলে যাবেন? বার্সা সতীর্থদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসাথে জেতা কত কত ট্রফি জয়ের স্বাদ, একসাথে কত শত ব্যর্থতার বিষাদ- মেসি কি এত সহজে ভুলে যাবেন? নাকি ভুলে যেতে পারবেন কখনো? স্পেনের সবচেয়ে বড় বন্দর বার্সেলোনার ফুটবল দলকে দেশটার সবচেয়ে বড় ফুটবল ক্লাবের একটা বানানো, কখনো কখনো পুরো বিশ্বের সবার সেরা করা- ক্লাবের অহংকার যে মেসি গায়ে মেখেছেন সেই মেসি আর যাই হোক ক্লাবকে যে এত সহজে ভুলে যাবেন না এটা একেবারে নিশ্চিত। মেসির বড় হওয়ার গল্প, শ্রেষ্ঠ হওয়ার গল্পের শুরুটা যে এখান থেকেই।

মেসির সামনে নতুন কন চ্যালেঞ্জ?

স্প্যানিশ লিগ লা-লিগার আর্থিক নিয়মের মারপ্যাচে শেষ পর্যন্ত বার্সাতে থাকতে পারলেন না লিওনেল মেসি। কুড়ি বছরের জার্নিটা, হাসি-কান্নার গল্পটা শেষই হয়ে গেল। টিস্যু পেপারে যে গল্পের সূচনা, সেই কাগজে মাত্র আর একটাবার কলমের খোঁচা না পড়ায় তবে কি সেই গল্পটার সমাপ্তিই ঘটল? গল্পটা তো এভাবে শেষ নাও হতে পারতো! সমাপ্তি স্ক্রিপ্টটা তো অন্যভাবেও লেখা যেত। সমাপ্তিটা তো লেখা যেত একেবারে, শেষ বিদায়ে। মেসি ক্যাম্প ন্যুতে শেষবার পা রাখতেন, বুটজোড়া তুলে রাখতেন চিরতরে। ভক্তদের কড়তালিতে সেদিন সিক্ত হতেন ফুটবল জাদুকর। মেসি হয়তো সেদিন কাঁদতেন, তবে সেই কান্নায় আর যাই হোক আফসোস অন্তত থাকতো না। সেদিন মেসির কান্না মিলেমিশে যেত সমর্থকদের চোখের জলে, সেদিন মেসির প্রতি ভালোবাসার কাব্য লেখা হতো কোটি-কোটি মানুষের নিস্তব্ধতায়।

লাল-নীল ডোরাকাটা জার্সিটা মেসিকে এভাবে বিদায় নাও বলতে পারতো

ঘোর দুঃসময়েও মেসিকে সবসময়ই পাশে পেয়েছে বার্সা। হারতে বসা ম্যাচ থেকে কত কতবার প্রাণের ক্লাবকে উদ্ধার করেছেন মেসি। ব্যর্থতায় কত কতবার দুমড়ে-মুচড়ে গেছেন। কখনো ব্যর্থতায় কেঁদেছেন, কখনো নিস্তব্ধতায় সব বেদনার গল্প বলেছেন। কেননা আটলান্টিকের স্বচ্ছ পানির মতো পরিস্কার ছিল বার্সার প্রতি মেসির নিবেদন, একেবারে নিখাদ।

২০১৭ এল ক্ল্যাসিকোতে, একেবারে শেষ মুহুর্তের গোলে দর্শকদের লিও মেসির বন্দনায় বুঁদ করা, সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে জার্সি উঁচিয়ে ধরে শ্রেষ্ঠত্বের আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করা- মূলত ওটাই লিওনেল মেসির পুরো ফুটবল ক্যারিয়ারের প্রতিকী রুপ। যেকোন মুহুর্তে জ্বলে ওঠো, যেকোনো প্রতিপক্ষকে নাকানি-চুবানি খাওয়াও। সবাইকে অবাক করো, ম্যাচের গতিপথ এক মুহুর্তে পাল্টে দাও- পুরো বিশ্বকে দেখিয়ে দাও তুমি কে! এটাই তো লিওনেল মেসি- ধারাভাষ্যকারদের ভাষায় ‘ইনস্ট্যান্ট ইমপ্যাক্ট’! চটজলদি ম্যাচের চেহারা পাল্টে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন বলেই তো অনেকের কাছে মেসি ‘লিওনেল ম্যাজিশিয়ান মেসি’। ভক্তরা যে খুব বেশি বাড়িয়ে বলেন সেটাও কিন্তু না! প্রতিটা অবিশ্বাস্য ফ্রিকিক গোলেই যে লেখা থাকে মেসির জাদুসত্ত্ব। প্রতিপক্ষের ছয়-সাতজনকে কাটিয়ে, গোলকিপারকে বোকা বানিয়ে মেসির একেকটা গোল- ভক্তদের মনে একটাই প্রশ্ন, “মেসি সত্যিই মানুষ তো?” নাকি ভিনগ্রহের কোন জাদুকর।

এল ক্ল্যাসিকোর সেই বিখ্যাত সেলিব্রেশনের পর মেসি

ডোরাকাটা লাল-নীল জার্সি আর লিওনেল আন্দ্রেস মেসি, যেন একে অপরের সমার্থক। মেসি বার্সাতেই থাকবেন, বার্সাতেই খেলবেন, বার্সাতেই হাসবেন-কাঁদবেন! এই যেন ছিল নিয়তি! সেই নিয়তির লিখনও এবার খন্ডন হয়েছে। মেসি শেষমেশ বার্সা ছাড়লেন।

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -

সর্বশেষ

- Advertisement -
- Advertisement -spot_img