আবেগঘন এক সংবাদ সম্মেলনের পর মেসির বিদায়ে ততোক্ষণে শোক ছড়িয়ে পরেছে চারিদিকে। কিন্তু জেরার্ড পিকেরা তো প্রফেশনাল খেলোয়াড়, মন তাদের প্রিয় তারকার বিদায়ে কাঁদলেও মাঠে তো তাদের নামতেই হতো। স্পেনের হোয়ান গ্যাম্পার ট্রফি তথা প্রীতি ম্যাচে জুভেন্টাসের মুখোমুখি যখন হলেন, পুরো মাঠ তখন ‘মেসি মেসি’ স্বরে উচ্ছ্বসিত। মেসি ছিলেননা, কিন্তু মেসিহীন এই ম্যাচে বার্সা ৩-০ গোলে হারিয়েছে জুভেন্টাসকে। গোল পেয়েছেন মেম্ফিস দিপে, মার্টিন ব্রেথওয়েট ও রিকুই পুইগ।
জুভেন্টাসের হয়ে প্রথমার্ধে মাঠে ছিলেন পর্তুগিজ তারকা ক্রিস্চিয়ানো রোনাল্দোও। স্পেনের ইয়োহান ক্রুইফ স্টেডিয়ামে এসেছিলেন ২৬০০ দর্শকও; যারা ভেবেছিলেন আরও একবার মেসি-রোনাল্দোকে একসাথে খেলতে দেখে তাদের চোখ জুড়োবে। কিন্তু সেই চোখ বেয়েই যে নেমে আসবে কান্না, পুরো মুখ জুড়ে থাকবে হতাশা সেটা কেউই কি ভেবেছিলো? মেসি আসেননি, মেসি-রোনাল্দোকে দেখা যায়নি আরও একবার লড়তে।
মেসি না এলেও মেসি ছিলেন পুরো মাঠ জুড়েই। যতবার রোনাল্দোর পায়ে বল গিয়েছে, পুরো স্টেডিয়াম ততোবারই গর্জে উঠেছে ‘মেসি মেসি’ স্বরে। মেসি বার্সা ছেড়েছেন ঠিকই, কিন্তু কোটি কোটি সমর্থকদের কাছে যে মেসি তখনও বার্সার। ২১ বছর ধরে যেই ছেলেটাকে লালন পালন করা, হঠাৎকরে সে যদি অন্য কারোর কাছে চলে যায়, বাবা মায়ের কাছে তো তবু সে তাদের সন্তান হয়েই থেকে যায় চিরদিন। মেসিও তেমনি থেকে যাবেন ভক্তহৃদয়ে। সেখান থেকেও বিদায় নেবার ক্ষমতা যে নেই স্বয়ং মেসিরও!
স্পেনের ইয়োহান ক্রুইফ স্টেডিয়ামে ম্যাচের ৩ মিনিটেই কাউন্টার অ্যাটাকে যায় বার্সা, ইউসুফ দেমির বাড়ানো বলটাকে বা পায়ের জোড়ালো শটে গোল করতে ভুল করেননি মেম্ফিস। মেম্ফিসের গোলে ১-০ তে এগিয়ে যায় বার্সা। প্রথমার্ধ শেষের আগে রোনালদো অবশ্য দুইবার গোলের সুযোগ তৈরি করেছিলেন। কিন্তু রোনাল্দোর দুর্দান্ত শটগুলোকে ঠেকিয়ে দেন বার্সা গেলরক্ষক নেটো; ডি বক্সের বাইরে থেকে রোনাল্দোর নেয়া ফ্রি-কিকটিকেও পৌচতে দেননি জাল অব্দি। বিরতির পর ৫৭ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ব্রেথওয়েট। মেম্ফিসের নেয়া কর্ণার কিকটি থেকে হেড করে বল পাঠিয়ে দেন জুভেন্টাসের জালে। যোগ করা সময়ে আরও একটি গোলের দেখা পান কাতালানরা। ৯২ মিনিটে বক্সের ভিতর থেকে বাম পায়ে নেয়া পুইগের শটটি ভেদ করে জুভদের জাল, ৩-০ ব্যবধানে জয় নিশ্চিত করে বার্সা।
ইনজুরির কারণে এই ম্যাচে খেলতে পারেননি ম্যানসিটি থেকে বার্সায় যোগ দেওয়া সার্জিও আগুয়েরো। স্পেনের হয়ে অলিম্পিকে খেলতে যাবার কারণে ছিলেন না এরিক গার্সিয়া ও পেদ্রিও। সে কারণে কোচ রোনাল্ড কোম্যান মেম্ফিস, ব্রেথওয়েট ও আঁতোয়ান গ্রিজমানকে আক্রমণভাগে রেখে ৪-৩-৩ ফরম্যাটে দল সাজিয়ে চেষ্টা করেন মেসির অভাব ঘুচাবার।
ম্যাচ শেষে মেসিকে নিয়ে কথা বলেছেন তার বহুদিনের সতীর্থ জেরার্ড পিকে। দিনটা তাদের জন্য কতটা কঠিন ছিল সেটাই বলেছেন পিকে।
“এটা কোনোভাবেই সেরা একটা দিন ছিল না। আমরা জানতাম এরকম একটা সময়ের মধ্য দিয়ে আমাদের যেতেই হবে, কিন্তু পুরো দলই মেসির বিদায়ে শোকাহত। বিশেষ করে আমরা যারা দীর্ঘদিন ড্রেসিং রুম শেয়ার করেছি লিওর সাথে”
মেসি বলেই হয়তো বার্সার ম্যাচ জয়কেও ছাপিয়ে তিনি। বার্সা জিতেছে, কিন্তু যা হারিয়েছে তা কি কখনো আর ফিরে পাওয়া সম্ভব? মেসির মতো খেলোয়ার যে যুগে যুগে আসে না! বার্সা-জুভদের ম্যাচে দর্শকদের হাহাকার, মেসি মেসি করে স্লোগান সবকিছু তো এটাই জানিয়ে দিয়ে গেলো,’ভক্তের চোখের জলে মেসি থাকবেন, মেসি থাকবেন গোল না হওয়ার আক্ষেপেও। মেসি থাকবেন ভক্তের স্লোগানে, মেসি থাকবেন কাতালানদের হৃদয়ে।‘