২ ডিসেম্বর ২০২৪, সোমবার

মেয়ে ক্রিকেটারদের জন্য রোল মডেল হতে চান আবতাহা মাকসুদ

- Advertisement -

“যখন আমি ছোট ছিলাম এবং আমি প্রথম হিজাব পরা শুরু করে ক্রিকেট খেলা শুরু করি, তখন আমার জন্য এটা বেশ কঠিন ছিল”

স্কাই স্পোর্টসকে কথাগুলো যিনি বলছিলেন, তার নাম আবতাহা মাহিন মাকসুদ। স্কটল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে খেলেন। একজন গর্বিত ব্রিটিশ মুসলিম, দ্যা হান্ড্রেডের দল বার্মিংহাম ফিনিক্সের বোলার, সেইসাথে একজন দন্তচিকিৎসার শিক্ষার্থীও। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই মাথায় হিজাব পড়েন, ক্রিকেট মাঠ দাঁপিয়ে বেড়ালেও ধর্মপালনে দেননা বিন্দুমাত্র ছাড়। নিজের আদর্শে অনুপ্রাণিত করতে চান অসংখ্য মানুষকে; হতে চান রোল মডেল। একজন ক্রিকেটারের পক্ষেও যে ধর্মপালন সঠিকভাবে করা যায়, তার অন্যতম উদাহরণ এই স্কটিস লেগ স্পিনার। স্কাই স্পোর্টসকেও বলেছেন এমন কথা।

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে উইকেট পাবার পর

“এখন যখন আমি এই বড় মঞ্চে আছি; আমি খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি, এটা আমার কাছে সত্যিই আশ্চর্যজনক মনে হয়। এবং, আমি জানি যে, যদি আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে পারি তবে যে কেউই করতে পারবে। আমি মাঝে মাঝেই পিছু ফিরে তাকাই আর দেখি আমি কতদূর এসেছি”

১১ বছর বয়সে স্থানীয় ক্রিকেট ক্লাব পলোকে যোগ দেন মাকসুদ। স্কটল্যান্ড মহিলা অনুর্ধ্ব-১৭ দলের হয়ে যখন প্রথম ডাক পান, তখন কেবল চারমাসই খেলেছেন ক্লাব ক্রিকেটে। ১৯ বছর বয়সেই অভিষেক হয়ে যায় আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে স্কটল্যান্ড নারী ক্রিকেট দলে। অভিষেকেই ছড়িয়েছেন আলো; ২.৩ ওভার বল করে ৮ রান দিয়ে পেয়েছিলেন ৩টি উইকেট। তার স্কটল্যান্ড দলে যোগ দেবার পর যে বদলেছে সেখানকার পরিবেশও, সেটাও বলেছেন মাকসুদ।

সতীর্থদের সাথে আবতাহা মাকসুদ

তিনি তার দেশের হয়ে খেলার সময় সতীর্থদের মাঝে যে ইতিবাচক পরিবর্তনগুলো অনুভব করেছেন তা বর্ণনা করেছেন স্কাই স্পোর্টসে।

“প্রথমে তাদের কারোরই ইসলাম ধর্ম এবং মুসলমানদের সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা ছিল না। আমরা কি খাই, কি পরিধান করি কোনো কিছু নিয়েই নাহ। কিন্তু এখন তারা অনেক কিছু শিখেছে। ক্রিকেট স্কটল্যান্ড সত্যিই অনেককিছু শিখেছে। ব্যাপারগুলো অনেকটা এমন যে, হালাল খাবার, লম্বা হাতাযুক্ত জামা, শর্টস না পরিধান করা এসব এখন তাদের কাছে দ্বিতীয় প্রকৃতির মতো”

 

২০১৫ তে অনুর্ধ্ব-১৭ দলের সতীর্থদের সাথে

স্কটল্যান্ড ক্রিকেট যে তার হালাল হারাম খাবারের ব্যাপারেও সচেতনতা অবলম্বন করেন, সেটাও বলতে ভুলেননি স্কটিস এই বোলার। সতীর্থদের ভাসিয়েছেন প্রসংসায়।

“এবং তারা এখন হালাল নয় এমন খাবার যাতে আমাকে দেয়া না হয়, সেই ব্যাপারেও অনেক সচেতন। তারা সবসময়ই আমার জন্য হালাল খাবারটাই নিশ্চিত করে। আমরা সত্যিই অনেক এগিয়েছি। যখন আমি প্রথম ক্রিকেট শুরু করেছিলাম, তখন এরকম কিছুই ছিলনা সেখানে। কিন্তু এখন এটা সর্বত্রই”

বার্মিংহাম ফিনিক্সের হয়ে ফিল্ডিং করবার সময়ে

ক্রিকেটের নতুন আসর দ্যা হান্ড্রেডে খেলতে এখন ইংল্যান্ডে অবস্থান করছেন মাকসুদ। প্রতিনিধিত্ব করছেন বার্মিংহাম ফিনিক্স দলের। এত বড় আসরে খেলতে এসেও যে নিজের ধর্ম পালনে অসুবিধে হচ্ছে না একটুও, সেটাও জানিয়েছেন তিনি।

“এখন আমি দ্যা হান্ড্রেড খেলতে এখানে (বার্মিংহাম ফিনিক্স) এসেছি। এখানে এসেও সত্যিই আমি হালাল খাবারই পাচ্ছি। দক্ষিণ এশীয়দের জন্য সেট-আপ এখন অনেক ভালো”

কিন্তু, একটা বিষয় নিয়ে আক্ষেপ আছে মাকসুদের। যখন ক্রিকেট শুরু করেন, তখন তার মতো জীবনযাপন করা কাউকেই পাননি, যাকে রোল মডেল হিসেবে ভাবা যেতো। নিজে পাননি বলেই হয়তো, হতে চান অন্যদের জন্য আদর্শ।

“আমি মনে করি প্রতিনিধিত্ব করাটা অনেক গুরুত্বপুর্ণ। আমি যখন বড় হচ্ছিলাম, তখন আমার মতো দেখতে কেউই ছিল না, যাকে আমি রোল মডেল ভাবতে পারি। কিন্তু, আমি সত্যিই এমন একজন হবার স্বপ্ন দেখি, যে অসংখ্য মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে”

নিজেকে রোল মডেল হিসেবে তৈরী করতে চান মাকসুদা

এরকম একটা আসরে খেলতে আসবার আগে নিজেকে নিয়ে কিছুটা চাঁপে ছিলেন মাকসুদ। কিন্তু বার্মিংহাম যে তাকে সাদড়ে গ্রহণ করে নিয়েছেন, সেটা তার নিজের কাছেও অবিশ্বাস্যকর।

“আমি সত্যিই কখনও অনুভব করিনি যে আমি এতবড় মঞ্চে খেলবো। এখন যখন আমি দ্য হান্ড্রেডে আছি তখন আমি অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেছি এবং আমার মনে হচ্ছে যে আমিই আছি। বার্মিংহাম দলটা অসাধারণ, তারা আমাকে যেভাবে বরণ করে নিয়েছে তা সত্যিই অবিশ্বাস্যকর”

ক্রিকেটে যখনই ধর্মপালনের আলোচনা আসে, সবার আগে যেই দুইটি নাম মাথায় আসে তারা হলেন ইংল্যান্ডেরই অলরাউন্ডার মইন আলি এবং সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান তারকা ব্যাটসম্যান হাশিম আমলা। বর্তমান প্রজন্মের জন্য দুজনই রোল মডেল। কে জানে! একদিন হয়তো এরকমই কোনো তালিকায় উচ্চারিত হবে আবতাহা মাহিন মাকসুদের নামও। তার নিজের স্বপ্নটাও যে এমনই!

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -

সর্বশেষ

- Advertisement -
- Advertisement -spot_img