“বন্ধু বোঝে আমাকে, বন্ধু আছে আর কি লাগে?” তপুর চিরপরিচিত গানটাই বুঝিয়ে দেয়, অন্তত একজন ভালো বন্ধু জীবনটা কীভাবে সহজ করে দিতে পারে। বৃহস্পতিবার পুনেতে ভিরাট কোহলির এমন একজন বন্ধুরূপেই যেন আবির্ভাব হয়েছিল লোকেশ রাহুলের!
স্টেডিয়ামে বসে কিংবা টিভির সামনে বসে যারা ভারত-বাংলাদেশের ম্যাচটা দেখেছেন, খুব সহজেই চোখে পড়ার কথা কোহলির সেঞ্চুরিটা যেন শেষমেশ হয়েই যায় তার জন্য রাহুলের সে কি চেষ্টা! ভারত খুব ভালোভাবেই জিতে যাচ্ছে, দরকার ১৯ রান; সেঞ্চুরি করতে কিং কোহলির দরকার তখন সেই উনিশই। ক্রিকেট ক্যারিয়ারের পুরোটা জুড়ে দেশের জন্য খেলা কোহলি ওই মুহূর্তে একবারও অবশ্য ভাবেননি ব্যক্তিগত মাইলফলকের কথা।

কোহলি ভাবেননি তো কি হয়েছে, ২২ গজে তাঁর সঙ্গী হিসেবে যে ছিলেন সেই লোকেশ রাহুল স্বপ্ন দেখেছেন, সতীর্থ বন্ধু তাঁর চোখের সামনেই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৮তম সেঞ্চুরি হাঁকাবেন। বারবার ভরসা দিয়ে গেছেন, “সেঞ্চুরির জন্য খেলো।” সেই ভাবনা থেকেই জয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে বেশ কিছু নিশ্চিত সিঙ্গেলও নেননি দুজন, অবশ্যই সেটা রাহুলের কথাতেই।
ম্যাচ শেষে ‘স্টার স্পোটর্সকে’ দেয়া সাক্ষাৎকারে এই উইকেটকিপার ব্যাটার জানিয়েছেন, ওই মুহূর্তে কি চলছিল কোহলির মাথায়, “সে (কোহলি) বুঝতে পারছিল না কী করা উচিত। বলেছিল, সিঙ্গেল না নেওয়াটা ঠিক ভালো দেখায় না। এটা তো বিশ্বকাপ, অনেক বড় মঞ্চ। আমি চাই না কেউ ভেবে নিক, আমি মাইলফলকের জন্য খেলছি।” রাহুলের উত্তর ছিল, “আমি বলেছি, এখনো আমরা জিতিনি। তবে জিতব সহজেই। তোমার তাহলে মাইলফলকে পৌঁছানোর সুযোগ থাকলে কেন সেটা করবে না? শেষ পর্যন্ত সে এটাই করেছে। আমি অন্তত সিঙ্গেল নেওয়ার জন্য দৌড়াতাম না”

শেষ পর্যন্ত ক্যারিয়ারের ৭৮তম সেঞ্চুরিটা কোহলি কীভাবে পেয়েছেন, তা বিস্তারিত লেখার খুব বেশি প্রয়োজন বলে মনে হয় না। নাসুম আহমেদের বলে ছক্কা মেরে ৯৭ বলে ভিরাট কোহলির অপরাজিত ১০৩, অপরপ্রান্তে রাহুলের তখন ৩৪ বলে ৩৪; পার্টনারশিপ ৮৩ রানের।
এক রুপকথার রাতের স্বাক্ষী হয়েছে পুনের দর্শক, ধন্যবাদটা তাই কোহলিকে তারা দিতেই পারে। তবে কোহলির ধন্যবাদটা কেবলই তোলা ছিল রাহুলের জন্যই, যেই বন্ধুর কারণেই আরও এক মাইলফলক স্পর্শ করার সুযোগ মিলল। সত্যিই তো রাহুলের মতো এমন একজন ‘বন্ধু’ চাইতে পারে সবাই! আপনিও কি চাইতেন না?