সাবিনা পার্কে টান টান উত্তেজনায় ভরা প্রথম টেস্টে পাকিস্তানকে ১ উইকেটে হারিয়েছে স্বাগতিক ওয়েস্টইন্ডিজ। ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন দুই ইনিংস মিলিয়ে ৮ উইকেট নেয়া ত্রিনিদাদ পেসার জয়ডেন সিলস; এরমধ্যে ২য় ইনিংসেই ৫টি । ৩০ রানে অপরাজিত থেকে দলকে ১ উইকেটে জয় এনে দেয়ার নায়ক আরেক পেসার কেমার রোচ।
জয়ের জন্য মাত্র ২ রান প্রয়োজন ওয়েস্টইন্ডিজের; পাকিস্তানের প্রয়োজন ১টি উইকেট। ম্যাচের শেষলগ্নে গিয়ে ২ রানটাকেও তখন মনে হচ্ছিলো পাহাড়সম; উইকেট পড়তে তো মাত্র ১টি বলই লাগে! ম্যাচ ড্র হবে নাকি ওয়েস্টইন্ডিজ জিতবে নাকি শেষমুহুর্তে হাসান আলি উইকেট তুলে নিয়ে ১ রানের জয় এনে দেবে পাকিস্তানকে, ম্যাচের উত্তেজনায় এইসব প্রশ্নই তখন মাথাজুড়ে। ক্যারিবিয়ানরা হাসি-ঠাট্টা করতে ভালোবাসে, এজন্যই বোধহয় চাপটাকে দূর করতে ড্রেসিং রুমে তখনও অনেকের মুখে হাসি। এককোণে গালে হাত দিয়ে বসে থাকা অধিনায়ক ক্রেগ ব্রাফেটকেই তখন শুধু যা একটু চিন্তিত মনে হচ্ছিলো। পাকিস্তান শিবিরেও একই অবস্থা; দলে না থাকা নাসিম শাহ মাঠের বাইরে থেকেই দলকে অনুপ্রাণিত করে যাবার চেষ্টা করে যাচ্ছিলো, কোচ মিসবাহ-উল-হক কম্পিউটার অ্যানালাইসিসের সাথে তখন বসে দলকে লড়াই করে যেতে দেখছে।
হাসান ওভারের পঞ্চম বলটা করলেন স্ট্যাম্প থেকে কিছুটা দূরে, অফসাইডে ফুল লেংথে। লক্ষ্য একটা আউটসাইডেজ আর উইকেটকিপারের হাতে ক্যাচ। কিন্তু তা আর হল কই! শেষে একা লড়তে থাকা রোচ কোন চাপই নিলেননা, বলটাকে ব্যাট দিয়ে আলতো ছুঁয়ে দিলেন কাভার অঞ্চলের দিকে। তাতেই এলো জয়, দৌড়ে এল সতীর্থরা। রোচ-সিলসরা যখন মুহুর্তটাকে উদযাপন করছে, হাসান আলি তখন মাটিতে বসে; যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না মুহুর্তটাকে। করবেই বা কিভাবে! ৩ বল আগেই যে পেয়ে যেতে পারতেন উইকেট, অফস্ট্যাম্পের বাইরে করা বলটাকে কাভার অঞ্চল দিয়ে ঠেলে দিতে গিয়ে রোচ যে তুলে দিয়েছিলেন ক্যাচই, ম্যাচটাও নয় কি?
জয়ের জন্য তখন স্বাগতিকদের প্রয়োজন ৬ রান। হাসানের বলটা রোচের ব্যাটের কোণ লেগে উইকেটকিপার এবং স্লিপে দাড়ানো ফিল্ডারের মধ্য দিয়ে চলে গেলো বাউন্ডারি সীমানা অতিক্রম করে। মোহাম্মদ রিজওয়ান চেষ্টা করলেও পারেননি ক্যাচটাকে লুফে নিতে। জয়ের সুযোগ আরও একবার পেয়েছিল সফরকারীরা। জয়ের জন্য তখনও ১৭ রান দূরে ক্যারিবিয়রা। শাহিন শাহ’র শর্ট লেংথে করা বলটাকে পুল করতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ তুলে দেন রোচ; ডিপ স্কয়ার লেগে দাড়ানো হাসানের হাত থেকে ফসকে বেড়িয়ে যায় বলটা, ম্যাচটাও। এজন্যই হয়তো ম্যাচ শেষে ওভাবে মুখে হাত দিয়ে বসে পড়লেন হাসান; চোখমুখজুড়েই হতাশা।
স্বাগতিকদের হয়ে ৫২ বলে ৩০ রান করে শেষ পর্যন্ত খেলেছেন রোচ, জয়সূচক রানটাও এসেছে তার ব্যাট থেকেই। শেষ উইকেট জুঁটিতে রোচকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছে দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট পাওয়া ১৯ বছর বয়সি সিলস। ১৩ বলে ২ রান করলেও, সামলেছেন শাহিনের দুর্দান্ত বাউন্সার, ইয়র্কারগুলো। ক্যারিবিয়ানদের হয়ে সর্বোচ্চ রান এসেছে জ্যামাইকার ঘরের ছেলে জার্মেইন ব্লাকউডের ব্যাট থেকে। তিনি করেছেন ৫৫ রান। পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট শাহিনের।
এর আগে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান স্কোরবোর্ডে তুলতে পারে ২০৩ রান। সফরকারীদের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৫ রান করেছেন বাবর আজম। ওয়েস্টইন্ডিজের হয়ে সর্বকনিষ্ঠ বোলার হিসেবে ৫টি উইকেট পেয়েছেন সিলস। ম্যান অব দ্য ম্যাচও নির্বাচিত হয়েছেন তিনিই। সিরিজের দ্বিতীয় এবং সর্বশেষ টেস্টে ২০ তারিখে মাঠে নামবে দুই দল।