শিরোনামের দুটি শব্দ ছাড়া আর কিছু প্রথম ধাক্কায় মাথায় আসলো না, পুরো ঘটনাটি ব্যাখ্যা করার জন্য এই দুটি শব্দের চেয়ে আর বেশি কিছু প্রয়োজনও বোধহয় নেই কারণ গোটা ক্রিকেটবিশ্বই এই মুহুর্তে সমস্বরে এই কথাটিই বলছে!
কোন উপমহাদেশের দেশ গত ১১ বছরে যা পারেনি, এই টেস্ট শুরুর আগে কেউ নিজেদের মধুরতম স্বপ্নেও যা ভাবেনি তাই করে দেখিয়েছে বাংলাদেশ। মাউন্ট মাঙ্গানুইতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তুলে নিয়েছে ৮ উইকেটের এক বিশাল ও ঐতিহাসিক জয়। টেস্ট চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়েছে নিউজিল্যান্ডেই!
ইবাদত হোসেনের ৪৬ রানে ৬ উইকেটের বিধ্বংসী স্পেলের কল্যাণে পঞ্চম দিন সকালের সেশনে নিউজিল্যান্ডকে মাত্র ১৬৯ রানে অলআউট করে দিয়ে জয়ের জন্য চতুর্থ ইনিংসে মাত্র ৪০ রানের টার্গেট পায় বাংলাদেশ। সাদমান ইসলাম ও নাজমুল হোসেন শান্তর উইকেট দুটি হারানো ছাড়া এই লক্ষ্য তাড়া করতে আর কোন সমস্যা হয়নি টাইগারদের। অধিনায়ক মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিম খেলা শেষ করে এসেছেন।
এই ম্যাচের পরতে পরতে যেন ইতিহাস। ২০১৩ সালে রবিউল ইসলাম শিবলুর পর প্রথম কোন বাংলাদেশী পেসার টেস্টে নিলেন ৫ উইকেট বা তাঁর বেশি। আগের দিনের সেই ম্যাচের মোড় পাল্টানো ৪ উইকেটের স্পেলের সাথে বুধবার সকালে রস টেলর আর কাইল জেমিসনকে আউট করেছেন। তাসকিন আহমেদও নিয়েছেন আরো ২টি উইকেট। লেজ মুড়ে দিয়েছেন মেহেদি মিরাজ। নিউজিল্যান্ডের লিড নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার কোন সুযোগই দেয়নি টাইগার বোলাররা।
এর আগে প্রথম ইনিংসেও টাইগার বোলারদের তোপে ৩২৮ রানে অলআউট হয়েছিলো নিউজিল্যান্ড। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের বে ওভালের ব্যাটিং স্বর্গ উইকেটে দুই ইনিংসেই বাংলাদেশের বোলারদের দাপট সইতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশ ঠিকই আগের ইনিংসে ৪৫৮ রান তুলেছে মাহমুদুল হাসান জয়, নাজমুল শান্ত, লিটন দাস ও মুমিনুল হকের পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস ও অন্যান্য ব্যাটারদের ছোট ছোট অবদানের কারণে।
এই ম্যাচের আগে নিউজিল্যান্ডে টানা ১০ ম্যাচ হারের দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে এসেছিলো বাংলাদেশ। ২০১৭তে প্রথম ইনিংসে ৫৯৫ করেও শেষদিনে হারতে হয়েছিলো। এই ম্যাচের তিনদিন ডমিনেট করার পরও তাই অনেকের মনেই ‘কিন্তু’ ছিলো যে শেষে সব ভন্ডুল করে কিনা বাংলাদেশ।
এই ম্যাচ চলাকালীন টিম্ম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন বলেছিলেন, “১০ বার আমরা হেরেছি। ১২বার তো হতে পারেনা। কোন না কোন দলকে (বাংলাদেশের) হাত তুলতেই হবে!”
গতকাল ইবাদত বলেছিলেন “জয় নিয়েই মাঠ ছাড়বো”
বাংলাদেশের এই জয় তো সুজন-ইবাদতের মতো গোটা দলের আত্মবিশ্বাস ও আত্মপ্রত্যয়েরই ফসল।
তাই “সাবাশ বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়…”
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
নিউজিল্যান্ড ১ম ইনিংস- ৩২৮/১০ (ডেভন কনওয়ে ১২২, নিকোলস ৭৫; শরিফুল ৩/৬৯, মিরাজ ৩/৮৬)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস- ৪৫৮/১০ (মুমিনুল ৮৮, লিটন ৮৬, মাহমুদুল জয় ৭৮; বোল্ট ৪/৮৫, ওয়াগনার ৩/১০১ )
নিউজিল্যান্ড ২য় ইনিংস- ১৬৯/১০ (ইয়ং ৬৯, টেলর ৪০; ইবাদত ৬/৪৬, তাসকিন ৩/৩৬)
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস- ৪২/২ ( শান্ত ১৭, মুমিনুল ১৩*; জেমিসন ১/১২)