২৭ জুলাই ২০২৪, শনিবার

সিরিজ নিশ্চিত নিউজিল্যান্ডের, বাংলাদেশের ক্যাচ ফেলার আক্ষেপ

- Advertisement -

তিনটা সহজ ক্যাচ ও রান আউট মিস, আশা জাগিয়েও হারতো হলো বাংলাদেশকে। নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা সুযোগ দিয়েছিলেন, সেই সুযোগ একবার হলেও হতো, পরপর তিনবার। সেই সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পুরোপুরি ব্যর্থ মুশফিক, মিঠুন এবং মাহেদী হাসান। দুইটা ক্যাচ ল্যাথামের এবং অন্যটা নিশামের। ক্যাচগুলো নিতে পারলে ম্যাচের চিত্রটাই হয়তো পাল্টে যেত। জয়ের পাল্লা ঝুকে যেত বাংলাদেশের দিকে। সে যাইহোক নিউজিল্যান্ড ম্যাচ জিতেছে ৫ উইকেটে। সেঞ্চুরি পেয়েছেন অধিনায়ক টম ল্যাথাম, ১১০ রানে অপরাজিত থাকেন। তিন ম্যাচ সিরিজ ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে কিউইরা।

২৭২ রানের টার্গেট, অস্বস্তি শুরু নিউজিল্যান্ডের। আশা জাগানো বোলিং মুস্তাফিজ-মাহেদীর। ওপেনার গাপটিলকে বিদায় করে প্রথম ধাক্কাটা দেন বাংলাদেশের বামহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। লেগ সাইডে করা বলকে খেলতে পারনেনি গাপটিল। ক্যাচ উঠে যায়, ধরা পরেন মুস্তাফিজের হাতেই, ২০ রানে করেন এই ওপেনার। যদিও ভয়ংকর হওয়ার আভাস দিয়েছিলেন গাপটিল। এরপর স্পিন চমক। মাহেদী হাসান নিজের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে আউট করেন হ্যানরি নিকোলসকে। মিউউইকেট দিয়ে ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু লেগ স্ট্যাম্পে লেগে বোল্ড হন নিকোলস। নিজের পরের ওভারেই চমৎকার এক ডেলিভারীতে বিদায় করেছেন উইল ইয়ংকে। সুইপ করতে গিয়েছিলেন কিন্তু বল টার্ন নেয় আর বোল্ড হন এই ব্যাটসম্যান । মাত্র এক রান করে মাঠ ছাড়েন ইয়ং। নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ তখন ৩ উইকেটে ৫৩।

মাঝের গল্পটা অধিনায়ক টম ল্যাথাম এবং ডেভন কনওয়ের। ১১৩ রানের পার্টনারশিপ দাপুটে জয়ের দিকেই রাখে নিউজিল্যান্ডকে। হঠাৎই ছন্দপতন। দারুণ থ্রুতে জুটি ভাঙ্গেন তামিম, ৭২ করে রান আউট হন কনওয়ে। এই উইকেটের পর আবারও চাঙ্গা হয় টাইগাররা। নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কিছুটা ভয় কাজ করছিল কনওয়ের বিদায়ের পর। পরপর তিনটা ক্যাচও দিয়েছিলেন নিশাম এবং ল্যাথাম। কিন্তু হঠাৎ মনোসংযোগ হারায় মুশফিক-মিঠুনরা।

৩৬তম ওভারের প্রথম বলেই উইকেটরক্ষক মুশফিকের হাতে ক্যাচ দেন জিমি নিশাম। বলটা গ্লাভসবন্দীও করেছিলেন কিন্তু রাখতে পারেননি মুশফিক।  দুই বলের ব্যবধানে অধিনায়ক ল্যাথামের ক্যাচ। এবার ধরতে পারলেন না মিঠুন। ডাইভ দিয়েছিলন কিন্তু টাইমিং হয়নি। তারপরের ওভারে মাহেদী সহজ ক্যাচ ধরতে ব্যর্থ হন। এবারও ল্যাথামের ক্যাচ। নিজের করা বলে ফিরতে ক্যাচ ধরতে ব্যর্থ হন মাহেদী। পরপর তিনটা ক্যাচ ফেলে যেন ম্যাচটাই ফেলে দেয় বাংলাদেশের ফিল্ডাররা।

সুযোগে নিশামের সঙ্গেও ৭৬ রানের পার্টনারশিপ হয় অধিনায়কের। নিশামকে থামান মুস্তাফিজ। কিন্তু ল্যাথাম অপরাজিত থাকেন।

তার আগে বাংলাদেশ অধিনায়ক এই ম্যাচে যা চেয়েছিলেন তার কাছাকাছি নিয়ে যান ব্যাটসম্যানরা। ৬ উইকেটে ২৭১ রান করে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের শুরুটা নড়বড়ে করিছেলন লিটন দাস, শক্ত ফিনিশিং দেন মোহাম্মদ মিঠুন। ৭৩ রানে অপরাজিত থাকেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। এবারও টস ভাগ্য তামিমের হয়ে কথা বলেনি, তাই কিউইদের সিদ্ধান্তে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, একটি পরিবর্তন নিয়ে। ডানেডিন থেকে ক্রাইস্টচার্চ। ভয় তাড়া করেছে বাংলাদেশকে। তবে উইকেটটা বেশ কিছুক্ষণ আলো পাওয়ায় ব্যাটিং সহায়ক হওয়ার ইঙ্গিত ছিল পিচ রিপোর্টে। কিন্তু শুরুতেই গোলমাল পাকান ওপেনার লিটন দাস।

শূন্যতেই মাঠ ছাড়েন। দ্বিতীয় ওভারে ম্যাট হেনরির চতুর্থ বলে পুল করতে গিয়ে শটে থাকা উইল ইয়ংয়ের হাতে ক্যাচ দেন। ডানেডিনের বাতাস যেন টেনে ছিলেন এই ওপেনার। কিন্তু তামিম পণ করেছিলেন খারাপ কিছু হতে দিবেননা আজ। তাই হয়েছে।

দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দেখেশুনে খেলেন তামিম ইকবাল-সৌম্য সরকার। এই জুটি ৮১ রান তোলে। তবে ভালো খেলতে থাকার মধ্যে হঠাৎই ছন্দপতন। মিচেল স্যান্টনারের বলে পুশ করতে গিয়ে স্ট্যাম্পিং হয়ে মাঠ ছাড়েন। ৪৬ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ৩২ করেন এই বাঁহাতি।

তামিম জীবন পান ৩৪ রানে। ১৫তম ওভারে তামিমকে হারাতে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি লাম্বা জেমিসন ফিরতি ক্যাচ নেন। কিন্তু এই পেসার ডাইভ দিয়ে বলটি মাটি ছোঁয়ার আগে তালুতে আটকে ফেলেছিলেন মনে হচ্ছিল। কিন্তু রিপ্লাইতে বেঁচে যান তামিম।

সেখান থেকে ফিফটির ফিফটি পূর্ণ করেন। অধিনায়ক সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। সেঞ্চুরিও বানাতে পারতেন ইনিংসটাকে। কিন্তু দুর্ভাগ্য রান আউটে মাঠ ছাড়েন ৭৮ রানে। ১০৮ বলে তাঁর ৭৮ রানের ইনিংসে ছিল ১১টি বাউন্ডারি। মুশফিকুর রহিমের ডাকে সাড়া দিয়ে দ্রুত একটি রান নিতে গেলে জিমি নিশাম পা দিয়ে বলকে স্ট্যাম্পে লাগান। বাংলাদেশ তখন ৩ উইকেট ১৩৩।

মুশফিক এই ম্যাচেও নিজের ছায়া হয়ে থাকলেন। ৪১তম ওভারে মিচেল স্যান্টনারের বলে বিদায় নেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল । ৫৯ বলে ৩টি চারে ৩৪ রান করেন তিনি।

কিন্তু মিঠুন-মাহমুউল্লাহ জুটিতে শক্ত ভীত পায় বাংলাদেশ। তাদের ৬৩ রানের জুটিতে টাইগাররা লড়াইয়ের পুঁজিও পেয়ে যায়। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কিউই পেসারদের ভালোই পড়ে নিয়েছিলেন এই ম্যাচের প্রস্তুতি। তাই ত্রাস হতে পারেননি ট্রেন্ট বোল্টরা। মিঠুন-মাহমুদউল্লাহ জুটি ভাঙ্গেন জেমসিন। ১৬ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু মিঠুন থেকে অবিচল, অপরাজিত। ৫৭ বলে করেন ৭৩ রান, ছয় চার ও দুই ছক্কায়। বাংলাদেশ পেয়ে যায় হাগলি ওভালে নিজেদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। ২০১৬ সালে ২৬৪ রান ছিল এর আগের সর্বোচ্চ।

সর্বোচ্চ সংগ্রহকে নিউজিল্যান্ড টপকে যায় ১০ বল হাতে রেখেই। আবার এই মাঠের নতুন রেকর্ডেও নাম উঠায় স্বাগতিকরা। সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জিতার রেকর্ড। এর আগে সর্বোচ্চ ২৬১ রান তাড়া করে জিতার রেকর্ড ছিল হাগলি ওভালে । বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে দু’দলের তৃতীয় এবং শেষ হওয়ানডে হবে ওয়েলিংটনে।

স্কোর:

বাংলাদেশ ২৭১/৬ এবং নিউজিল্যান্ড ২৭৫/৫

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -

সর্বশেষ

- Advertisement -
- Advertisement -spot_img