ইউয়েফা ইউরোর শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে টাইব্রেকারে ৫-৪ গোলে ফ্রান্সকে হারিয়েছে সুইজারল্যান্ড। নির্ধারিত নব্বই মিনিটে ৩-৩ গোলে সমতার পর অতিরিক্ত সময়েও নিষ্পত্তি না হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। শেষ পেনাল্টিতে কিলিয়ান এমবাপ্পে গোল করতে ব্যর্থ হওয়ায় আসর থেকে বিদায় নেয় ফ্রান্স। নিশ্চিতভাবেই টুর্নামেন্টের প্রথম অঘটন দেখল ফুটবল।
?? RESULT: Switzerland through to quarter-finals after thrilling shoot-out!
WHAT A GAME! ?
? Did you see that coming!? #EURO2020
— UEFA EURO 2020 (@EURO2020) June 28, 2021
সুইজারল্যান্ড এর আগে ১১বার বৈশ্বিক আসরে খেলেছে, প্রথমবার তারা উঠেছে কোয়ার্টার ফাইনালে। প্রথমবারের মতো পেনাল্টি শুট আউটে জিতেছে সুইজারল্যান্ড। ২৬ শট নিয়েও ম্যাচ হারার যন্ত্রনা পোড়াবে ফ্রান্সকে। পুরো ম্যাচ যারা দেখেছেন তারা এ ম্যাচের সঙ্গে মিল খুঁজে নিতে পারেন কলকাতার সিনেমা চতুষ্কোণের সঙ্গে। পরিউচালক সৃজিত মুখার্জি যেভাবে নাটকের পর নাটক সাজিয়েছেন, ফুটবল বিধাতাও এ ম্যাচে ছড়িয়েছেন রঙ।
?? Switzerland have reached the quarter-final of a major tournament for the first time in 67 years ? #EURO2020 pic.twitter.com/8Esi3UfjIW
— UEFA EURO 2020 (@EURO2020) June 28, 2021
ন্যাশনাল অ্যারেনায় ম্যাচের সবে তখন পনের মিনিট। কাউন্টার অ্যাটাকে সুইজারল্যান্ড। মাঠের বাঁ প্রান্ত থেকে স্টেভেন জুবেরের বাঁ পায়ের ভাসানো ক্রস। হ্যারিস সেফারোভিচের হেড ফরাসি গোলরক্ষক হুগো লরিসের ডান পাশ দিয়ে জড়িয়ে যায় জালে। ফলে এবারের ইউরোতে টানা তিন ম্যাচে পিছিয়ে পড়ল ফ্রান্স।
তবে ম্যাচের শুরুটা ছিল ফ্রান্সের। সকাল দেখে তো আর সবসময় বলা যায় না দিনটা কেমন যাবে। অন্তত শুরুতে ফ্রান্সের আক্রমণ দেখে কেউ ভাবেনি, ফ্রান্স নয় প্রথম গোলটা করবে সুইসরা। ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই কর্নার পায় ফ্রান্স। পুরো ম্যাচে ফরাসিরা কর্নার পেয়েছিল ৮টি। প্রথম কর্নার থেকে গোল আসেনি, আঁতোয়া গ্রিজমানের কর্নারে ফাঁকা পেয়েও বাইরে হেড করেন রাফায়েল ভারান। ম্যাচের প্রথম দশ মিনিট ছিল শুধুই ফ্রান্সের। বেশিরভাগ সময়ই বল ছিল সুইসদের অর্ধে। তবুও করিম বেনজেমা-কিলিয়ান এমবাপ্পেরা ডি বক্সের সামনে এসেই বারবার খেই হারিয়েছেন।
গোল খাওয়ার মিনিটখানেক পরই গোলের সম্ভাবনা দেখেছিল ফ্রান্স, কিন্ত গ্রিজমানের ফ্রি কিক খুব সহজেই ক্লিয়ার করে সুইজারল্যান্ড। দশ মিনিট পর আবার ফ্রিকিক, আবার প্রতিহত। এবার এমবাপ্পের শট প্রতিহত হয় মানবদেয়ালে। প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে সমতায় ফেরার সুযোগ আসে ফ্রান্সের সামনে। বক্সের বাঁ প্রান্ত থেকে বেনজেমার শট আটকে দেন ডিফেন্ডার। এক গোলে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে ফ্রান্স।
? The moment Hugo Lloris saved Ricardo Rodríguez's penalty! ?#EURO2020 https://t.co/sZZxHRjC3y pic.twitter.com/mtgVeqTQlb
— UEFA EURO 2020 (@EURO2020) June 28, 2021
বিরতি থেকে ফিরে ফুটবল দেখল রোমাঞ্চকর চার মিনিট। কী ছিল না সেখানে? গোল মিস কিংবা অসাধারণ গোল, পেনাল্টি সেভ করে সবাইকে তাতিয়ে তোলা। ঘটনার শুরু ৫৫ মিনিটে, শেষ ৫৯ মিনিটে। ৫৫ মিনিটে পেনাল্টি পায় সুইজারল্যান্ড। রিকার্ডো রদ্রিগেজের পেনাল্টি সেভ করে ফ্রান্সের নায়ক তখন অধিনায়ক হুগো লরিস। পরের মিনিটে ফ্রান্সকে সমতায় ফেরানোর সুযোগ নষ্ট করেন কিলিয়ান এমবাপ্পে, ডি বক্সের ভিতর থেকে তার কোনাকুনি শট সামান্য বাইরে বেরিয়ে যায়। পরের মিনিটে সেই এমবাপ্পের থ্রু বল থেকে বেনজেমার বাঁ পায়ের ফ্লিক, তারপর ঠান্ডা মাথার ফিনিশিং-ফলাফল সমতা। পরের মিনিটে আবার বেনজেমা ঝড়, গ্রিজমানের শট গোলকিপার ইয়ান সোমারের হাতে লেগে চলে যায় বারের কাছে, সেখানে লাফিয়েন উঠে হেডে গোল করে লিড এনে দেন রিয়াল মাদ্রিদ তারকা।
ম্যাচের তখন ৭৫ মিনিট । ডি বক্সের বাইরে থেকে পল পগবার দুরন্ত শট। ডান পায়ের বাঁকানো শট সুইসদের জালে আছড়ে পড়ার সাথে সাথে গ্যালারিতে ছড়িয়ে পড়ে মুগ্ধতা। ৩-১ গোলে পিছিয়ে থাকা সুইস সমর্থকরা হয়তো তখন হাঁটা ধরেছেন বাড়ির পথে।
?⚽️
Perfection. Pogba. #EURO2020 https://t.co/duYpNX28Ka pic.twitter.com/qYiOgn1ODV
— UEFA EURO 2020 (@EURO2020) June 28, 2021
সাসপে্নসেরও সাসপেন্স থাকে, গল্পের ভেতরেও থাকে গল্প। মিনিট ছয়েক পরে কেভিন এমবাবুর ক্রসে দারুণ হেডে ব্যবধান দ্বিগুন করেন সেফেরোভিচ। মিনিট পাঁচেক পর মারিও গাভ্রানোভিচের গোল বাতিল হয় অফসাইডে। সেই গাভ্রানোভিচই নব্বই মিনিটে সুইসদের ফেরান সমতায়। অতিরিক্ত সময়ের শেষ মিনিটে কিংসলে ক্যুম্যানের শট বারে লাগলে গোলবঞ্চিত হয় ফ্রান্স।
?? Gavranović ⚽️?#EURO2020 pic.twitter.com/nFrBHfakyZ
— UEFA EURO 2020 (@EURO2020) June 28, 2021
ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ৯৫ মিনিটে বেঞ্জামিন পাভার্দের শট দারুন দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেন সুইস গোলরক্ষক সোমার। বাকিটা সময় দুদলই রক্ষনাক্তক ফুটবল খেললে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে সবগুলো শটে গোল করে সুইজারল্যান্ড, শেষ শটে মিস করে এমবাপ্পে। ফলে ইউরোর চলতি আসর থেকে বিদায় বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের।