২৭ জুলাই ২০২৪, শনিবার

বারো ম্যাচ পর গোল খেয়েও জিতেছে ইতালি

- Advertisement -

ইউয়েফা ইউরো ২০২০ এর অন্যতম সেরা ম্যাচে অতিরিক্ত সময়ের তিন গোলের থ্রিলারে অস্ট্রিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়েছে ইতালি। ফলে ১১৬৯ মিনিট পর গোল খেয়েছে ইতালি। ইতালির হয়ে ফেদ্রিকো কিয়েসা এবং মাতেও পেসিনা নাম তুলেছেন স্কোরশিটে। অস্ট্রিয়ার একমাত্র গোলদাতা সাসা কালাদজিক। অবাক করা ব্যাপার, তিন গোলদাতার কেউই ছিলেন না শুরুর একাদশে।

সর্বশেষ ৩০ ম্যাচ আর অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে টানা ১৩ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড নিয়ে মাঠে নামে ইতালি। ম্যাচ শেষে সেই রেকর্ডের মুকুটে আরেকটা পালক যুক্ত করেছে আজ্জুরিরা। ইউরোতে প্রথমবারের মতো নক আউট রাউন্ডে উঠেই বিদায় নিল অস্ট্রিয়া, তবে ডেভিড আলাবাদের মাঠের পারফরম্যান্স মুগ্ধ করেছে সবাইকে। ২০০০ সালের পর এই প্রথম ইউরোতে প্রথম চার ম্যাচের সবগুলোতেই জিতেছে ইতালি। এই ম্যাচ নিয়ে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে ইতালির অষ্টম ম্যাচ গড়ালো অতিরিক্ত সময়ে, ইউরোতে আর কোনো দলের এতগুলো নকআউট ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে যায়নি। অবাক করা ব্যাপার, এই আটবারের মধ্যে এবারই প্রথম অতিরিক্ত সময়ে গোল করল ইতালি। টানা ১২ ম্যাচ জেতা ইতালির একমাত্র আক্ষেপ, তাদের ক্লিন শিট থেমেছে ১২ ম্যাচ পর ।

পুরো ম্যাচে দুইদল মিলে হলুদ কার্ড দেখেছে পাঁচবার। দুইদল মিলে ফাউল করেছে ৩২টা! বাংলা প্রবাদের কথা তো সবারই মনে আছে, সকালের সূর্য দেখে জানা যায় দিনটা কেমন যাবে। ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই যখন নিকোলো বারেলাকে ফাউল করে বসলেন মার্কো আর্নাতভিচ, বুঝতে আর বাকি নেই পুরো ম্যাচে উত্তেজনার রসদ কত জমা হবে। দশ মিনিট বাদে প্রথমবারের মতো গোলের সুযোগ আসে ইতালির সামনে। লেফট ব্যাক লিওনার্দো স্পিনাজোলার কোনাকুনি শট একটুর জন্য বারের বাইরে দিয়ে চলে যায়। ১৭ মিনিটে আবার গোলের সুযোগ আসে আজ্জুরিদের সামনে। এবার বারেলার শট দারুন ক্ষিপ্রতায় ঠেকালেন অস্ট্রিয়া গোলরক্ষক দ্যানিয়েল বাচম্যান। পরের মিনিটেই কাউন্টার অ্যাটাক থেকে গোল করতে পারতো অস্ট্রিয়া। মার্কেল সাবিৎজারের থ্রু বল খুঁজে নেয় আর্নাতভিচকে, তবে তার শট চলে যায় বারের উপর দিয়ে।

৩২ মিনিটে গোল পেতে পারতো রবার্তো মানচিনির শিষ্যরা। ডি বক্সের সামান্য বাইরে থেকে সিরো ইমোবিলের নেওয়া বুলেট গতির শট ফিরে আসে পোস্টে লেগে। ইমোবিলের সঙ্গে সঙ্গে আক্ষেপে পুড়ে পুরো ইতালিও। মিনিট পাঁচেক পর আবার ইতালির সামনে সুযোগ, আবারও মিস। এবার অস্ট্রিয়ার ত্রাতা গোলকিপার বাচম্যান। স্পিনাজোলার শট ঝাঁপিয়ে পড়ে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন করেন বাচম্যান। ফলে গোলশূন্যভাবেই শেষ হয় প্রথমার্ধ।

প্রথমার্ধের শুরুতে যে দৃশ্য, দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও তাই। পঞ্চাশ মিনিটে বক্সের একদম বাইরে থেকে ক্রিস্টোফ বামগার্টনারকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন জিওভানি দি লরেঞ্জ। পরের মিনিটেই আবারো ইতালির হলুদ কার্ড, এবার ভুক্তভোগী বারেলা। তবে বারেলার অভিব্যক্তি বলে দেয় মোটেও খুশি ছিলেন না তিনি। সেই ফ্রি কিক থেকে গোল করার সুযোগ ছিল অস্ট্রিয়ার, অধিনায়ক ডেভিড আলাবার শট একটুর জন্য জালের দেখা পায়নি।মিনিট দশেক পর আবার অস্ট্রিয়ার আক্রমণ। সাবিৎজারের দূরপাল্লার শট ইতালিয়ান অধিনায়ক লিওনার্দো বেনুচ্চির পায়ে লেগে পোস্টের বাইরে থেকে বেরিয়ে যায়। দুই মিনিট পর ইতালির জালে বল জড়ায় অস্ট্রিয়া, তবে অস্ট্রিয়ার সঙ্গবদ্ধ আক্রমণ থেকে আসা গোল বাতিল হয় ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফরির সহায়তায়। দুই মিনিট পর আবারো ইতালির ডিফেন্স কাঁপিয়েছিল অস্ট্রিয়া, আরেকবার সাবিৎজারের শট চলে যায় বারের কোল ঘেঁষে।

ম্যাচের তখন ৭২ মিনিট, আক্রমণে এবার ইতালি। আলেক্সান্দার দ্রাগোভিচের শট এবারও দেখা পায়নি গোলের। মিনিট চারেক পর ইতালিয়ান ডি বক্সের মধ্যে পেনাল্টির আবেদন করেন অস্ট্রিয়ার খেলোয়াড়রা, ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফরির সহায়তা নিয়ে পেনাল্টির বাঁশি বাজানোর জন্য একপ্রকার প্রস্তুতই ছিলেন রেফরি। কিন্ত বাঁধ সাধেন স্টিফেন লেইনার। এই অস্ট্রিয়ান রাইট ব্যাক একটুর জন্য অফসাইডের কবলে পড়লে গোল খাওয়ার হাত থেকে বাঁচে ইতালি। নির্ধারিত নব্বই মিনিটে কোনোদলই আর গোলমুখ খুলতে পারেনি। ফলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

 

অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধের শুরুতেই আক্রমণে ইতালি, ৯৪ মিনিটে ফেদ্রিকো কিয়েসার শট ঠেকিয়ে দেন বাচম্যান। তবে মিনিট খানেক পর আর বাঁচাতে পারেননি, সেই কিয়েসাই বক্সের মধ্য থেকে বুলেট গতির শটে গোল করে এগিয়ে দেন ইতালিকে। ইংরেজিতে একটা কথা আছে, ‘ কাম আফটার এনাদার’। ইতালির জন্যেও হয়তো একথাই প্রযোজ্য। প্রথম গোল আসার দশ মিনিটের মাথায় দ্বিতীয় গোল, মাতেও পেসিনার গোলে ব্যবধান ২-০। তার আগেই মিনিটেই লরেঞ্জ ইনসিনিয়ার দুরন্ত ফ্রি কিক সেভ করেছিলেন বাচম্যান।

দুই গোল খেয়ে যেন সম্ভিত ফেরে অস্ট্রিয়ার। আক্রমনের পর আক্রমণ সাজায় তারা, শেষ বাঁশি বাজার মিনিট সাতেক আগে গোল করে ম্যাচ জমানোর আশা জাগান সাসা কালদজিক। বাকিটা সময় অনেক চেষ্টা করেও সমতায় ফিরতে পারেনি অস্ট্রিয়া। তাই সমানতালে লড়েও আসর থেকে বিদায় নিতে হয়েছে অস্ট্রিয়াকে।

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -

সর্বশেষ

- Advertisement -
- Advertisement -spot_img