আরও একটা বছর শেষের পথে, আর মাত্র কয়েক ঘন্টা বাকি। বাংলাদেশ ক্রিকেটে এই এক বছরে কম ঘটনা ঘটেনি। মাঠ এবং মাঠের বাইরের ইতিবাচক ও নেতিবাচক সব খবর নিয়ে আলোচনার শীর্ষে টাইগাররা, ট্রাইগ্রেসরাও খুব পিছিয়ে ছিল বলা যাবে না। সবমিলে কেমন ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট? ২০২১ কি ক্রিকেটে আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ?
মেয়েদের ক্রিকেট দিয়েই শুরু করা যাক। ২০২১ সালে বাংলাদেশ নারী দল হেরেছে মাত্র একটি ম্যাচ; বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে। নভেম্বরের শুরুতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টানা চার ম্যাচে বড় জয়, বিশ্বকাপ বাছাইপর্বেও পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বজায় রেখেছে ধারাবাহিকতা। থাইল্যান্ডের বিপক্ষে হারলেও প্রথমবারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছে টাইগ্রেসরা। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন দিয়েছেন তাদের পারিশ্রমিক বাড়ানোর বার্তাও।
টাইগাররা অবশ্য খেলেছে বেশ কিছু সিরিজ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও ছিল এই বছরেই। ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে শুরু, পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে বছরের শেষ। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে ম্যাচের প্রতিটি জিতলেও দুই টেস্টেই হারতে হয়েছে। পরের সিরিজেই নিউজিল্যান্ডে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি দুই ফরম্যাটেই ধবলধোলাই বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কায় গিয়েও বদলেনি ভাগ্য; প্রথম টেস্টে ড্র করলেও পরের টেস্টেই বরণ করতে হয়েছে হার, ওয়ানডে সিরিজটা অবশ্য ২-১ ব্যবধানে জিতেছে লাল সবুজরাই।
প্রথম ছয় মাস ততোদিনে পেরিয়েছে, টাইগাররাও পেয়েছে এক মাসের বিরতি। জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ে সফর; টি-টোয়েন্টিতে ২-১ ব্যবধানে জয়, তিন ওয়ানডের তিনটিতেই এবং দুই টেস্টের একটিতে জয়। পুরো সিরিজে হার বলতে ঐ একটা মাত্র টি-টোয়েন্টিই। আগস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়, সেপ্টেম্বরে কিউইদের ৩-২ ব্যবধানে হারিয়ে শুরু বিশ্বকাপ অভিযান।
আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থেকে বিশ্বকাপে রিয়াদ বাহিনী, প্রথম ম্যাচেই স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে মাথায় ভেঙ্গে পড়লো আকাশ। ওমান এবং পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে জিতে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করলেও পাঁচ ম্যাচের প্রতিটিতেই মাথা নীচু করে মাঠ ছাড়তে হয়েছে টাইগারদের। দেশে ফিরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও কাজের কাজ হয়নি কিছুই। তিন টি-টোয়েন্টি আর দুই টেস্টের প্রতিটিতেই হেরে বছর শেষ করতে হয়েছে মুশফিকুর রহিম- সাকিব আল হাসানদের।
সবমিলে ২০২১ সালে বাংলাদেশ দল খেলেছে ১২টি ওয়ানডে, ২৮টি টি-টোয়েন্টি এবং ৭টি টেস্ট। ওয়ানডেতে জয় ৮টিতে, টি-টোয়েন্টিতে ১১টি এবং টেস্টে একমাত্র জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
ঘরের মাঠে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টিতে অজিবোধ, কিউইদের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের আনন্দে যেমন ভেসেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট, তেমনই আছে অনেক লজ্জাজনক পারফরম্যান্সও। তার সাথে মাঠের বাইরে যা কিছু ঘটেছে, তার স্বাক্ষী বাংলাদেশের গণমাধ্যম, জনতা, ক্রীড়াপ্রেমি থেকে শুরু করে খেলোয়াড়রাও। সবমিলে আশীর্বাদ বলা ঠিক হবে নাকি অভিশাপ সেই প্রশ্ন তোলা থাকুক। সকল বাজে অভিজ্ঞতাগুলোকে পেছনে ফেলে নতুন বছরে বাংলাদেশ ক্রিকেট এগিয়ে চলুক নতুন উদ্যমে, নতুন করে। এটাই সতেরো কোটি হৃদয়ের প্রার্থনা।
কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি, আলোচনা-সমালোচনা নতুন কিছু নয় বাংলাদেশ ক্রিকেটে। কিন্তু, প্রতিবারই টাইগারদের জয়েই হয়েছে সবকিছুর অবসান। এবারেও প্রয়োজন সাকিব-রিয়াদদের দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন। একটা জয় বদলে দিতে পারে পুরো দৃশ্যপটটাই। হারলে যতোই গালি দেই না কেনো, সমালোচনা যতোই হোক না কেনো, সব তো ঐ স্বপ্নটা না পূরণের যন্ত্রনাতেই। সবকিছুকে পেছনে ফেলে ওরা ১৬ জন করুক নতুন শুরু। সতেরো কোটি মানুষ সব ভুলে মিলে মিশে আবারো হয়ে যাক একাকার। চায়ের কাপে জমে উঠুক আড্ডা, মুখে ফিরুক হারাতে বসা হাসিটাও। প্রয়োজন শুধু একটা জয়ের..