গতি আর ইনসুইং! যেই দেশ স্পিনারদের জন্য বিখ্যাত, সেই আফগানিস্তানে দাপুটে পেসার, নাম ফজল হক ফারুকি। বয়সটা এখন বাইশ, কিন্তু নজর কেড়েছিলেন সতেরোতেই। অনূর্ধ্ব-১৭ দলে জানান দিয়েছেন মেধার, ঝলক দেখিয়েছেন পরের বছর অনুষ্ঠিত ইমার্জিং দলের হয়ে এশিয়া কাপে। অবাক করে দেয়ার মতো তথ্য হলো, অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে ইমার্জিং কাপ খেলার দুই বছর পর ফজল খেলেছেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলে! তারও আগে অভিষেক হয়ে গেছে ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে!
চোখ কপালে তোলার মতো তথ্য আছে আরও। খুব বেশী নয়, দুই বছর পেছনে ফিরে যাওয়া যাক। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ক্রিকেট টুর্নামেন্টগুলোর মধ্যে অন্যতম ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ। আফগানিস্তানের ফজলের গল্প ততোদিনে ছড়িয়ে পড়েছে ভারতেও, অথচ বয়স মাত্র কুড়ি। যেই বয়সে অনেকেই স্বপ্ন বুনতে শুরু করে, সেই বয়সে ফজল বোলিং করেছেন কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের নেটে; অবাক করেছেন ক্রিস গেইল, লোকেশ রাহুলদের।

পরের বছর আইপিএল শুরুর আগেই তাই বিস্ময় এই বালককে ডেকে নিয়েছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি, চেন্নাই দলের সাথে রেখেছেন নেটে বল করার জন্য। ততোদিনে অবশ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও অভিষেক হয়ে গেছে ফজলের, খেলে ফেলেছেন একমাত্র টি-টোয়েন্টি। জাতীয় দলের হয়ে খেলা কোনো ক্রিকেটারের নেটে বল করা, এই ঘটনাও খুব কমই দেখা যায় ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে।
ফজলের এরপরের গল্পটা প্রায় সকলের জানা। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে একটি মাত্র ওয়ানডে খেলেছেন, বিপিএল খেলতে এসেছেন বাংলাদেশে। পুরো মৌসুম থাকলেও মিনিস্টার ঢাকা ফজলকে খেলিয়েছে মাত্র তিনটি ম্যাচ। মূলত বেঞ্চটাই গরম করেছেন আফগান এই পেসার। আর মনে মনে হয়তো ভেবেছেন নিজেকে প্রমাণের ব্যাপারেও। আইপিএলে দল পাওয়া হয়তো জুগিয়েছে আত্মবিশ্বাস।

জীবনে প্রথমবার প্রতিপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশ; যুবদলের হয়েও কখনো খেলা হয়নি লাল সবুজদের সাথে। প্রথম দেখাতেই ফজলের বাজিমাত; নিজের করা দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ওভারেই তুলে নিয়েছেন ৪ উইকেট, মাত্র ২ রান দিয়ে। অথচ ফজলের প্রথম ওভারেই এসেছিল ১২! পরবর্তীতে আর কোনো উইকেট পাননি বলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাওয়া হয়নি প্রথমবারের মতো পাঁচ উইকেটের স্বাদ। পুরো ক্যারিয়ারেও একবারই পেয়েছিলেন পাঁচ উইকেট, সেটাও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে।
ধূমকেতুর গতিতে এগিয়ে চলা ফজল ক্যারিয়ার শেষে আলোকিত এক নক্ষত্র হতে পারবেন কি না সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে এইটুকু বয়সে যেভাবে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছেন ক্রিকেটবিশ্বে, তাতে তাঁকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেই পারেন আফগানরা। ক্রিকেটটাই যে এক সুতোয় বেঁধে রেখেছে আফগানদের; সুখ বলতেও তো বাকি ঐ ক্রিকেটটাই! ফজল নিজেও হয়তো চাইবেন দেশে সুখ ছড়িয়ে দিতে, পেস বোলিংয়ে বিপ্লব ঘটাতে…