২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার

কাপ গেলো রোমে, ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইতালি

- Advertisement -

ইংল্যান্ডকে টাইব্রেকারে ৩-২ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ইউরো জিতলো ইতালি। নিদৃষ্ট সময়ের খেলা ১-১ গোলে সমতায় শেষ হওয়ার পর অতিরিক্ত সময়ে খেলা গড়ায়, ১২০ মিনিটেও কোনো জয়ীর দেখা পায়নি ওয়েম্বলি। টাইব্রেকারে নিষ্পত্তি হওয়া ম্যাচে জিয়ানলুইজি দোনারুমার বীরত্বে ৫৩ বছর পর ইউরো জেতে ইতালি

ইটস কামিং হোম নাকি ইটস কামিং রোম? কাদের স্লোগানটা পূর্ণতা পাবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রথম জবাবটা ইংলিশদের থেকেই এলো, উত্তর যখন আসে ওয়েম্বলিতে ম্যাচের তখন দু মিনিটও পেরোয়নি। মাঠের ডান প্রান্ত থেকে কিয়েরান ত্রিপিয়ারের বাড়ানো বল পেয়ে যান ফাঁকায় দাঁড়ানো লুক শ, এই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড লেফট ব্যাকের বাঁ পায়ের শটে দর্শক হয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না ইতালিয়ান গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোনারুমার। নিজের জন্মদিনে নিজেকেই উপহার দিলেন শ, ইংল্যান্ডের জার্সিতে করলেন প্রথম গোল। তার ১ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডের গোল আবার ইউরো ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুততম গোল। মেজর টুর্নামেন্টের ফাইনালে তৃতীয় ইংলিশ হিসেবে গোল করলেন শ।

 

ছয় মিনিট পর সমতায় ফিরতে পারতো ইতালি। বক্সের সামান্য বাইরে ফেদ্রিকো চিয়েসাকে ফাউল করলে ফ্রিকিক পায় ইতালি। লরেঞ্জ ইনসিনিয়ার সেই ফ্রিকিক বারের উপর দিয়ে গেলে গোলবঞ্চিত হয় ইতালি। ৩৫ মিনিটে বড় সুযোগ পায় ইতালি, চিয়েসার দুর্দান্ত শট বক্সের সামান্য বাইরে দিয়ে চলে যায়। প্রথমার্ধের একদম শেষ মিনিটে সমতায় ফেরার আরেকটা সুযোগ পেয়েছিল ইতালি, চিরো ইমোবিলের শট প্রতিহত হয় জন স্টোনসের গায়ে লেগে। ফিরতি বলে শট নেন মার্কো ভেরাত্তির দুর্বল শট তালুবন্দি করেন ইংলিশ গোলকিপার জর্দান পিকফোর্ড।

দ্বিতীয়ার্ধের তখন কেবল মিনিট চারেক হয়েছে। ইংল্যান্ডের নাম্বার টেন রাহিম স্টার্লিং বক্সের একদম বাইরে থেকে অনেকটা হতাশা থেকে ফাউল করে বসলেন ইনসিনিয়াকে। কেননা মিনিটখানেক আগেই ইতালি ডি বক্সের মধ্যে লিওনার্দো বেনুচ্চি এবং জর্জ চিয়েলিনি স্টার্লিংকে ফেলে দিলেও রেফরি পেনাল্টির বাঁশি বাজাননি। ইতালি সেই ফ্রিকিক থেকে গোল পায়নি, ইনসিনিয়ার ফ্রিকিক চলে যায় বারের সামান্য বাইরে দিয়ে।

 

৫৭ মিনিটে আবার ইতালির আক্রমন, আবার ইনসিনিয়া। এবার ইনসিনিয়াকে গোলবঞ্চিত করেন পিকফোর্ড। মিনিট পাঁচেক পর নিশ্চিত গোল বাঁচান পিকফোর্ড। বক্সের মধ্যে দুই তিনজনকে বোকা বানিয়ে চিয়েসার ডান পায়ের শট বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন পিকফোর্ড।

ম্যাচের তখন ৬৭ মিনিট, ইনসিনিয়ার কর্নার ভেরাত্তির মাথায়, তার হেড প্রথমবার ঠেকালেও জটলা থেকে গোল করে ইতালিয়ান দর্শকদের সামনে গিয়ে বুক চিতিয়ে লড়াই করার উদাহরণ সৃষ্টি করলেন লিওনার্দো বেনুচ্চি। ফলাফল সমতা। ইউরোতে ইতালির হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলতে নেমে ইউরো ফাইনালে সবচেয়ে বয়স্ক ফুটবলার হিসেবে গোল করার রেকর্ড গড়লেন বেনুচ্চি। ইউরোর ২০০০ সালের আসরের পর এই প্রথম দুটো দলই গোল করল ইউরো ফাইনালে।

মিনিট পাঁচেক পর দুর্দান্ত বল বেরারদির সামনে। ভেরাত্তির থ্রু বল ফ্লিক করলেও গোলে রাখতে পারেননি বদলি হিসেবে নামা এই উইঙ্গার। দুদলই আক্রমনের পর আক্রমন করেছে বাকি সময়, তবে গোল পায়নি কোনোদলই। সময় যত গড়িয়েছে শারীরিক লড়াইও দেখা গেছে ততই। ১-১ গোলে সমতায় থেকেই নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা শেষ করে দুইদল।

অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে ইতালি দুইবার হানা দেয় ইংল্যান্ডের বক্সে,দুবারই জটলা থেকে ক্লিয়ার হয় বল। এই অর্ধে ইংল্যান্ডেরও সুযোগ আসে কর্নার থেকে, লুক শর কর্নার কেলভিন ফিলিপস গোলের বাইরে মারেন। বিরতির ঠিক আগে ইতালি বক্সের বাইরে পাওয়া ফ্রি কিকও কাজে লাগাতে পারেনি ইংল্যান্ড। রবার্তো মানচিনি ম্যাচের শেষ পরিবর্তন হিসেবে গ্রুপ পর্বের জোড়া গোল স্কোরার ম্যানুয়েল লোকাতেলিকে মাঠে নামান।

 

অতিরিক্ত সময়ে ইংল্যান্ডের সব আক্রমণই মূলত জ্যাক গ্রেয়ালিশকে ঘিরে গড়ে ওঠে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত গ্রেয়ালিশ তার জাদু দেখিয়ে এগিয়ে নিতে পারেননি ইংলিশদের। অতিরিক্ত সময়ের শেষ মিনিটে পাওয়া কর্নারও কাজে লাগাতে পারেনি আজ্জুরিরা। টুর্নামেন্টের সেরা দুই গোলি জিয়ানলুইজি দোনারুমা আর জর্ডান পিকফোর্ডের কাঁধেই শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে দলকে জেতানোর দায়িত্ব বর্তায়

টাইব্রেকারের আগে টসে জিতে আগে শট করার সিদ্ধান্ত নেয় ইতালি আর প্রথম শটেই গোল করে ইতালিকে এগিয়ে নেন ডোমেনিকো বেরারদি। ইতালির মতো প্রথম শটে গোল পায়ইংল্যান্ডও,অধিনায়ক হ্যারি কেইনের শটে সঠিক দিকে লাইফেও আটকাতে পারেননি দোনারুমা। দুই গোলির লড়াইয়ে প্রথম জয়টা পায় পিকফোর্ডই, আন্দ্রেয়া বেলোত্তির শট ফিরিয়ে দেন ইংলিশ গোলকিপার। পিকফোর্ড ফেরানোর পর হ্যারি ম্যগুয়ার গোল করে এগিনে নেন ইংল্যান্ডকে। যদিও, লিড বেশিক্ষন ধরে রাখতে পারেনি ইংল্যান্ড, মার্কাস র‍্যাশফোর্ডের শট বারে লেগে ফিরলে টাইব্রেকারে ফেরে সমতা। জর্ডান সাঞ্চোর শট ফিরিয়ে দিয়ে পিকফোর্ডের সাথে হিসাব চুকিয়ে নেন দোনারুমা আর শুট আউটে এগিয়ে যায় ইতালি।

ইতালির অন্যতম সেরা পেনাল্টি শুটার জর্জিনিওকে ফিরিয়ে দিয়ে ম্যাচ শেষ শট পর্যন্ত জমিয়ে রাখেন পিকফোর্ড। শেষ শটে বুকায়ো সাকাকে ফিরিয়ে দিয়ে ৩-২ গোলে ইতালির জয় নিশ্চিত করেন জিয়ানলুইজি দোনারুমা।

 

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -

সর্বশেষ

- Advertisement -
- Advertisement -spot_img