২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার

গল্প যদি শুনতে চাও, আমার কাছে এসো…

- Advertisement -

গল্পটা কোথায় থেকে শুরু করব সেটাই ভাবছি। শুরু থেকেই শুরু করা যাক….

ময়মনসিংহের জুম্মন, সকলের মুনিম শাহরিয়ার। নয়াপাড়া, মেডিকেল কলেজের ঠিক উল্টো দিকের এলাকাটায় জন্ম। বাবা চাকরি করতেন বিমা কোম্পানিতে, আজকাল শুরু করেছেন ব্যবসা। মা এনজিওতে; চাচা মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষা অফিসার। পরিবারের প্রত্যেকেই প্রায় শিক্ষিত, মুনিমও ছিলেন না পিছিয়ে। নিজ মেধায় হাজারও স্টুডেন্টকে পেছনে ফেলে জায়গা করে নিয়েছিলেন ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে।

স্বাভাবিকভাবেই এমন এক ছেলের থেকে সকলেই ভালোভাবে পড়াশোনাটাই আশা করবে, হয়েছেও তাই। কিন্তু ছোট্ট মুনিমের স্বপ্ন ততোদিনে ক্রিকেটের ঐ সবুজ মাঠটায় বড় হতে শুরু করেছে। বিষয়টা আরেকটু স্পষ্ট করতে একটা ছোট গল্প বলা যাক।

বাবা মায়ের সাথে ছোট্ট মুনিম

তখন মৌখিক পরীক্ষার যুগ, মুনিমকে ক্লাসের শিক্ষিকা প্রশ্ন করেছিলেন ‘বড় হয়ে কী হতে চাও?’ সকলেই যেখানে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বলে গলা শুকোতে ব্যস্ত, মুনিম সেখানে হাঁটলেন অন্য পথে। বললেন, ‘বড় হয়ে ক্রিকেটার হতে চাই।’ শিক্ষিকা কোনোভাবেই এই উত্তর মেনে নিতে পারেননি, তাই মুনিমের কপালে জুটল শূন্য। কিন্তু, সেই শূন্যটাই যে জীবন বদলে দেবে সেটা মুনিমও জানত না।

ভাবছেন শূন্য কিভাবে জীবন বদলে দিতে পারে কারোর? তাহলে শুনুন! এই ছোট ছোট ঘটনাগুলো এড়ায়নি মুনিমের বাবার চোখ, ছেলে যে ততোদিনে ক্রিকেটকে হৃদয়ে ধারণ করা শুরু করেছেন সেটা খুব ভালোভাবেই বুঝেছেন বাবা। মুনিমকে এনে দিয়েছেন ব্যাট-বল, যুগিয়েছেন প্রেরণা। অলিতে-গলিতে সর্বত্র তখন ব্যাট হাতে মুনিম, পাড়া প্রতিবেশীরাও যে কতো বিরক্ত হয়েছেন আনমনে সেটা অনুমান করাই যায়!

বাবাই জুগিয়েছেন প্রেরণা

এরপরেও সহজ ছিল না ক্রিকেটের পথ চলা, বাবার সাপোর্ট পেলেও পরিবারের অনেকেই নিয়েছেন মুখ ফিরিয়ে। কিন্তু দমে যাননি মুনিম; ময়মনসিংহ জেলা দল হয়ে বিভাগীয় দলে নিলেন জায়গা করে। সেখান থেকে তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেট খেলতে ঢাকায়, পৌঁছে গেলেন অনূর্ধ্ব-১৯ যুবদলেও। এখান থেকে মুনিমের ভবিষ্যতের যেই গল্পটা আপনার চোখে ভাসছে, মুনিমের সাথে ঘটেছে একদম তার বিপরীতটাই।

অনূর্ধ্ব-১৭ এর মুনিম শাহরিয়ার

বন্ধু মেহেদি হাসান মিরাজ, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাইফউদ্দিন আহমেদরা যখন জাতীয় দলে মুনিম তখন জেলায় জেলায়, পাড়ায় মহল্লায় খেলে বেড়িয়েছেন ক্ষ্যাপ। সিসিএসের হয়ে প্রথম বিভাগে অভিষেকের পর গাজী গ্রুপের হয়ে অভিষেক হয়েছিল প্রিমিয়ারে। সেখান থেকে আবাহনী; কিন্তু মোক্ষম সুযোগটাই পাচ্ছিলেন না কিছুতেই। এরমধ্যে আর্থিক দুরাবস্তার সাথে মানসিক বিপর্যয়, বিষন্নতা! সবমিলে জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়টাই পার করেছেন মুনিম।

অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে শ্রীলঙ্কা সফর

আবাহনীতে দুই ওপেনার লিটন দাস-নাঈম শেখ প্রথম থেকেই ছিলেন। দলে হচ্ছিল না সুযোগ। হঠাৎ লিটনের অসুস্থতায় খুলে গেল দরজা, নিজেকে চেনালেন নতুন করেই। ১৪ ম্যাচে ৩৫০ এর ওপর রান, ৩০-এর মত গড়, দুটি হাফ সেঞ্চুরি। স্ট্রাইক রেট প্রায় ১৪৫! পারফেক্ট টি-টোয়েন্টি প্যাকেজ। তারপরেও বিপিএলে পেলেন না দল, আগ্রহই দেখায়নি কেউ।

বন্ধুরা যখন জাতীয় দলে, মুনিম তখন খেলে বেরিয়েছেন জেলায় জেলায়

এলাকায় সকলেই উপহাস করতো জাতীয় দলে খেলতে না পারায়। সোশ্যাল মিডিয়াতেও অপমানিত হতে হয়নি কম। সেই সময়টার কথা মুনিম বলেছেন প্রথম আলোকে, “আমি টুকটাক যা ক্রিকেট খেলতাম, তাতেই নিজের খরচ চালানোর চেষ্টা করতাম। বিষন্নতায় ভুগছিলাম। আমার কিছুই যেন কাজে আসছিল না। ক্রিকেট খেলব কি না, এ নিয়েও দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলাম। আমাদের ক্রিকেট সংস্কৃতিই এমন, এখানে টিকতে হলে মানসিকভাবে অনেক শক্ত হতে হয়। মাঝেমধ্যে মনে হবে খেলা ছেড়ে দেওয়ার কথা। আশপাশের মানুষজন কেবল জাতীয় দলে কেন খেলতে পারছি না, সেটি নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। কেউ কেউ বলত, তোমার সঙ্গে খেলা ক্রিকেটাররা যদি জাতীয় দলে খেলতে পারে, তুমি কেন পারবে না। এসব কথা আশপাশে চলতেই থাকে। স্বাভাবিকভাবেই এই কথাগুলো কষ্ট দিত।”

সিসিএস থেকে আবাহনী হয়ে বিপিএল! এরপরের গল্পটা সকলের জানা…

যখন ক্রিকেট ছেড়ে দেয়ার উপক্রম প্রায়, ঠিক তখনই ডাক পেয়েছেন বিপিএলে; আবাহনী কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনের ফরচুন বরিশালে। প্রথম দিকে সুযোগ না মিললেও যখন সুযোগ পেয়েছেন নিজেকে চিনিয়েছেন নতুন করে, বিশ্বও চিনেছে মুনিমকে। চার ম্যাচে করেছেন ১৩৪ রান, সর্বোচ্চ ৫১, গড় ৩৩.৫০, স্ট্রাইক রেট ১৬৮ প্রায়!

চোখে না পড়লেও মুনিম জানিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন, “জীবনে সুযোগ আসবেই। হতাশ না হয়ে মানসিকভাবে শক্ত থেকে এগিয়ে যেও। জয় আসবেই আসবে……”

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -

সর্বশেষ

- Advertisement -
- Advertisement -spot_img