২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার

তামিমকে যেভাবে সাপোর্ট দিয়েছেন ‘উইকেটকিপার’ মুশফিক…

- Advertisement -

নতুন এক রুপকথা, নতুন এক মহাকাব্য; নায়কের ভূমিকায় আফিফ হোসেন-মেহেদী হাসান মিরাজ। ১৭৪ রানের হার না মানা জুটিতে যেভাবে দলকে জয় এনে দিয়েছেন তাতে নায়ক তো হওয়ারই কথা। কিন্তু এই মহাকাব্যে আছে আরও একটা গল্প, যেটা নিশ্চিতভাবেই হারিয়ে যাবে আফিফ-মিরাজের অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের আড়ালে। গল্পটা মুশফিকুর রহিমের, গল্পটা উইকেটকিপার মুশফিকের।

ঠিক ২৭১ দিন পর বাংলাদেশের জার্সিতে উইকেটকিপার মুশফিক, তর্কে-বিতর্কে যত কথাই থাকুক না কেন মুশফিক ঠিকই আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন কেন তিনি ঐ জায়গাটায় থাকতে চান, কেন থাকাটা জরুরী।

ষষ্ঠ ওভারের খেলা চলছে, তাসকিন আহমেদের বাউন্সারে ইব্রাহিম জাদরানের পুল এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সহজ ক্যাচ মিস। হতাশ তাসকিন অপলক তাঁকিয়ে ছিলেন রিয়াদের দিকে, অনুজের মন খারাপ বুঝতে পেরেই মুশফিক বলে উঠলেন, “মুভ অন কর, তাসকিন। ভুলে যা, ল্যাড।” 

টানা পেস বোলার দিয়ে বোলিং করিয়েছেন তামিম ইকবাল, শুরুর দিকে অতিরিক্ত রান দিয়েছেন প্রচুর প্রত্যেকেই। সময়েরও হয়েছে অপচয়; সঠিক সময়মতো ইনিংস শেষ করতে না পারলে স্লো ওভার রেটের কারণে পড়তে হবে শাস্তির মুখে। সেটা মনে পড়তেই সবার উদ্দেশ্যে মুশফিকের আওয়াজ, “একটু জলদি করি ভাই, এখনও দুই ওভার পেছনে আছি।”

একসাথে তামিম-মুশফিক, রিয়াদের উইকেট লাভের উদযাপনে

পনেরোতম ওভারে প্রথমবারের মতো বল হাতে মেহেদী হাসান মিরাজ, প্রথমেই মেইডেন। এই মেইডেনের পেছনে যতটা অবদান মিরাজের ঠিক ততোটাই মুশফিকেরও। বিস্তারিত বলার প্রয়োজন নেই, মুশফিকের কথাগুলো শুনলেই বুঝে নেয়া যায়, “আফিফ, একটু এইদিকে থাকিস, ও এইদিকে মারে সোজা। সাকিব একটু এইদিকে আয়, গ্যাপটা একটু বড় হয়ে গেছে; আরেকটু…। বাইরে করিস না। এই গতিটা ভাল মিরাজ…”

দুই ক্যাচ মিস হয়ে গেছে ততোক্ষণে, আফগান ব্যাটসম্যানরাও গড়তে শুরু করেছে প্রতিরোধ। কেমন যেন চুপচাপ প্রকৃতি, শরিফুল ইসলামের ভালো বলেও মুখ বেয়ে বেরোয় না কারোর আওয়াজ। ঠিক ঐ মুহুর্তে সবাই মিলে চিল্লাইলে যেই আওয়াজটা হতো, তার চেয়েও উচ্চস্বরে মুশফিকের গলা বেয়ে বেরিয়ে এলো, “সাবাশ শরিফ, সাবাশ। ও খুব ভালো বল করতেছে, সবাই একটু আওয়াজ দেই ভাই।”

শেষ দিকে নাজিবুল্লাহ জাদরান সুযোগ পেলেই দুই নিচ্ছিলেন। কিন্তু মুশফিক চাচ্ছিলেন সেটা থামাতে। তাই সাকিবের করা ৪৫তম ওভারে লিটনকে সাবধান করে দিলেন আগেই, “লিটন, উপরে থাকিস একটু আর সোজা সোজা থাকিস। দুই হইতে দিস না।” সাকিবের এরপরের গল্পটা সবাই জানে, রশিদকে আউট করার পর সেই হাসিটাও নিশ্চিতভাবেই এখনও ভাসছে চোখে।

ম্যাচের শুরু মতো শেষেও চাপ ছিল স্লো ওভার রেট নিয়ে। বল শেষ হতেই তাই শরিফুলকে বড় ভাই মুশফিকের আদেশ, “তাড়াতাড়ি যা শরিফ, তাড়াতাড়ি যা..।” কথা রেখেছেন শরিফুলও, সামর্থ্যের সবটা দিয়ে চেষ্টা করেছেন জলদি করার।

সেই ওভারে সাকিব নিয়েছেন দুই উইকেট

এছাড়াও পুরো ম্যাচ জুড়েই মুশফিকের “রিয়াদ ভাই, একটু এইদিকে… এইদিক চাপ, খেলুক এইটা…. সাবাশ স্যাক…. লাভলি মিরাজ… ওয়েলডান বয়েজ…  বোলিং তাসকিন, বোলিং…  গুড বয়েজ… ভালো এটা শরিফ… কাম অন বয়েজ…  ভালো ভালো, এই লেংথটা ভালো… চলো ভাই, চলো চলো….. ইইইইইইইই…. ব্রিলিয়ান্ট… চলো বয়েজ…  আরও চাপ, আরও চাপ…. উপরে থাক… বল সাকিব আল হাসান…” কথাগুলো তো ছিলই।

বাংলাদেশ ক্রিকেটে নিশ্চিতভাবেই আজ সুখের দিন। এই সুখের পুরো কৃতিত্বটাই মিরাজ-আফিফ পেলেও দিনশেষে ক্রিকেট তো দলের খেলা, দলীয় পারফরম্যান্সের খেলা। আর সেই দলীয় পারফরম্যান্সের কথা বলতে গেলে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়ের আরও এক নায়ক মুশফিকও, উইকেটকিপার মুশফিক….

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -

সর্বশেষ

- Advertisement -
- Advertisement -spot_img