২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার

মেসি ম্যাজিকে আর্জেন্টিনার জয়

- Advertisement -

ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজতে তখন মিনিট দশেক বাকি। ডি বক্সের সামান্য বাইরে লিওনেল মেসিকে ফাউল করায় ফ্রি কিক পায় আর্জেন্টিনা। সেই ফ্রিকিক থেকে গোল আসেনি, বল প্রতিহত হয় মানবদেয়ালে। তবে সেই ফ্রিকিক পাওয়ার আগে চার-পাঁচজন উরুগুইয়ান খেলোয়াড়কে যেভাবে কাঁটালেন, যেভাবে পায়ে পায়ে ঘোরালেন মনে হবে পৃথিবীতে মেসির খেলা দেখার থেকে সুন্দর কিছু নেই। ঝুম বৃষ্টির দিনে প্রেমিকার হাতের কদম যেমন সুন্দর, তেমন সুন্দর মেসির ‘সলো’। প্রথম ম্যাচে চিলির বিপক্ষে ফ্রিকিক থেকে গোল পেলেও এ ম্যাচে পাননি,তবুও আর্জেন্টিনার ১-০ গোলের জয়ে সরাসরি অবদান লিওনেল মেসির। ১৩ মিনিটে মেসির প্রচেষ্টায় গোল পেয়েছে আর্জেন্টিনা, তার ক্রস থেকে গোল করে আকাশি নীল শিবিরকে জয়ের স্বাদ পাইয়ে দেন গুইদো রদ্রিগেজ। নিজের ১৩তম অ্যাসিস্টে কোপা আমেরিকার ইতিহাসে সর্বকালের সর্বোচ্চ অ্যাসিস্টের মালিক এখন লিওনেল মেসি। টানা তিন ম্যাচ ড্রয়ের পর মেসি ম্যাজিকে জিতেছে আর্জেন্টিনা।

কোপা আমেরিকার সবচেয়ে সেরা দুই দলের লড়াইয়ে বল পজিশনে এগিয়ে থাকলেও গোলমুখে কোনো শটই নিতে পারেনি রেকর্ড ১৫ বারের চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে। উল্টোদিকে আর্জেন্টিনা শুধু গোলেই শট নিয়েছে ৬টি। যার নেতৃত্বে ছিলেন লিওনেল মেসি। নয়টা সফল ড্রিবলের পাশাপাশি ১৫টা ডুয়েল জিতেছেন। ফলে টানা তিন ম্যাচের জয়খরা ঘুচিয়ে পূর্ণ তিন পয়েন্ট পকেটে পুড়েছে আলবিসেলেস্তেরা। অসাধারণ পারফরম্যান্স করে ম্যাচসেরা লিওনেল মেসি, কোপা আমেরিকায় ১২তম ম্যাচসেরা হওয়ার কৃতিত্ব গড়লেন বার্সেলোনা তারকা। উরুগুয়েকে হারানোর পথে টানা ১৫ ম্যাচ অপরাজিত আর্জেন্টিনা। শেষবার আর্জেন্টিনা হেরেছিল এই কোপাতেই, ২০১৯ সালে ব্রাজিলের বিপক্ষে সেমিফাইনালে।

গারিঞ্চা স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনা-উরুগুয়ে ম্যাচের তখন ১৫ মিনিটও অতিক্রম হয়নি। লিওনেল মেসি ছোট করে কর্নার করে ফিরতি বলে বল বাড়ালেন ডি বক্সে, উদ্দেশ্য গুইদো রদ্রিগেজ। রিয়াল বেটিস ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের জন্য বল নয়, যেন উপহারের থালা পাঠিয়েছিলেন মেসি। একেবারে ‘পিকচার পারফেক্ট’! সেই ক্রস থেকে গোল নামক উপহার তুলে নিতে ভুল করেননি রদ্রিগেজ। ফলাফল উরুগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচের ১৩মিনিটেই লিড আর্জেন্টিনার।

তবে মিনিট তিনেক আগেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল আর্জেন্টিনার সামনে। ক্রিশ্চিয়ানো রোমেরোর হেড তালুবন্দি করতে সমস্যা হয়নি উরুগুয়ে গোলরক্ষক ফার্নান্দো মুসলেরার। তারও দুই মিনিট আগে এগিয়ে যেতে পারতো আর্জেন্টিনা, মাঠের ডান পাশ থেকে মেসি তার ট্রেডমার্ক স্টাইলে কাট করে ভিতরে ঢুকে ডি বক্সের সামান্য বাইরে থেকে জোরালো শট নিলেন। ঝাঁপিয়ে পড়ে মুসলেরা হাত ছোঁয়ালেও বল পেয়ে যান আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড লাউতারো মার্তিনেজ, ফাঁকা পোস্টে বল পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ ইন্টার মিলান স্ট্রাইকার।

২৭ মিনিটে পেনাল্টি পেতে পারতো উরুগুয়ে। নিজেদের ডি বক্সের মধ্যে এডিনসন কাভানিকে ফেলে দেন রদ্রিগেজ। উরুগুয়ের খেলোয়াড়রা পেনাল্টির আবেদন করলেও সেই আবেদনে কর্ণপাত করেননি রেফরি। সেই কাউন্টার অ্যাটাক থেকে গোল পেতে পারতো আর্জেন্টিনা, তবে কর্নারের বিনিময়ে তা রক্ষা করেন মুসলেরা। প্রথমার্ধের বাকিটা সময় দুদলের ডিফেন্ডারদের বড় ধরনের পরীক্ষায় পড়তে হয়নি। বার কয়েক লুইস সুয়ারেজদের ক্রস বন্দি হয় এমিলিয়ানো মার্তিনেজের গ্লোভসে, কয়েকবার উরুগুয়ের ত্রাতা মুসলেরা।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই উরুগুয়ের আক্রমণ, ফেদ্রিকো ভালভার্দের বাড়ানো বলে নিকোলাস দে লা ক্রুজ পা ছোঁয়ালেন। তবে তা ধরতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক মার্তিনেজকে। ৬৯ মিনিটে গোল পেতে পারতো উরুগুয়ে। মাতিয়াস ভিনার বাড়ানো বল ফাঁকা পোস্টে পেয়েও পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ লুইস সুয়ারেজ। মিনিট পাঁচেক পর আবার সুয়ারেজের সামনে সুযোগ, বক্সের মধ্যে আতলেতিকো মাদ্রিদ স্ট্রাইকার দারুন ‘বাইসাইকেল কিক’ করলেন। তবে তার শট বারের অনেক উপর দিয়ে চলে যায়। ম্যাচের বাকিটা সময় চলেছে আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ। কখনো বা মেসি ম্যাজিক।

সুয়ারেজ-কাভানিদের চেষ্টা ছাপিয়ে শেষ বেলায় শারীরিক ফুটবল ম্যাচে বাড়িয়েছে উত্তেজনা। তবে দিনশেষে ব্যবধানটা গড়েছে ১৩ মিনিটের সেই গোল। এ নিয়ে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে শেষ চার ম্যাচের তিনটাতেই গোল করতে ব্যর্থ উরুগুয়ে। এ জয়ের পর ৪ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে আর্জেন্টিনা, আর টেবিলের চারে উরুগুয়ে।

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -

সর্বশেষ

- Advertisement -
- Advertisement -spot_img