২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার

‘শুধু আমার না, প্রায় সব ক্রিকেটারেরই প্রিয় খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান’

পরিবারের সবাই উচ্চশিক্ষিত, মুনিম নিজেও পড়তেন ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে। সেখান থেকে ক্রিকেটার হওয়ার যাত্রাটার আছে নিজস্ব এক গল্প। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বন্ধুরা যখন জাতীয় দলে, মুনিম তখন খেলে বেড়িয়েছেন পাড়ায়-মহল্লায়। মোক্ষম সুযোগটাও আসছিল না, তার সাথে আর্থিক দুরাবস্থা, মানসিক অবসাদ! ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন ক্রিকেটটাই, সেখান থেকে এখন জাতীয় দলে জায়গা পাওয়ার অপেক্ষায়; কেমন ছিল অভিজ্ঞতা অলরাউন্ডারকে জানিয়েছেন মুনিম।

- Advertisement -

প্রশ্ন: নয়াপাড়া, মেডিকেল কলেজের ঠিক উল্টো দিকের এলাকাটায় বেড়ে ওঠা। খেলা থাকলে কতটা মিস করেন জায়গাটাকে?

মুনিম শাহরিয়ার: আমার জন্মই তো ওখানে। বাপ-দাদার ভিটা বলতে পারেন। খেলা না থাকলে ওখানেই ছুটে যাই, খেলা থাকলেও ভীষণ মিস করি জায়গাটাকে। এখানেই জন্ম আমার, টান তো থাকবেই।

প্রশ্ন:  পরিবারের সবাই শিক্ষিত, আপনি নিজেও জিলা স্কুলের ছাত্র ছিলেন। কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখাটা?

মুনিম শাহরিয়ার: শুরুর দিকে অনেক চাপ কাজ করত; যতদিন আমি বয়সভিত্তিক, প্রথম বিভাগ ক্রিকেট খেলছি। বড় চাচা একবার আমার ব্যাট থেকে শুরু করে সবকিছু কেড়েও নিয়েছিলেন। উনি শিক্ষা অফিসার ছিলেন। তবে, আমার আব্বু আম্মুর পক্ষ থেকে সাপোর্ট পেয়েছি। শুরুর দিকে চাচা একটু কঠোর ছিলেন ক্রিকেটের ব্যাপারে। তবে সময়ের সাথে সাথে যখন ভালো খেলতে শুরু করলাম, তখন থেকে সকলের সাপোর্ট পেয়েছি। সবাই বলেছে, ‘ঠিকাছে, তুই খেল। তুই খেলোয়াড় হো।’


“বড় চাচা একবার আমার ব্যাট থেকে শুরু করে সবকিছু কেড়েও নিয়েছিলেন। শুরুর দিকে চাচা একটু কঠোর ছিলেন ক্রিকেটের ব্যাপারে। তবে সময়ের সাথে সাথে যখন ভালো খেলতে শুরু করলাম, তখন থেকে সকলের সাপোর্ট পেয়েছি”


 

বাবা মায়ের সাপোর্টটা সবসময়ই পেয়েছেন মুনিম

প্রশ্ন:   বন্ধু মিরাজ-সাইফউদ্দিন-শান্তরা জাতীয় দলে দীর্ঘদিন, আপনি খেলে বেড়িয়েছেন লিগ। কেমন লাগত?

মুনিম শাহরিয়ার: অবশ্যই খারাপ লাগত। ওরা আমার বন্ধু-বান্ধবই ছিল। ওরা আমার সবসময়ই ভালো চায়। প্রায়ই বলত, ‘কী রে জাতীয় দলে খেলবি না?’ অনেকেই যখন এই ধরণের কথা বলত ঐ সময়টুকুর জন্য খারাপ লাগত। পরে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি। ভেবেছি, ‘সবার আমার প্রতি অনেক আশা, আমাকে সবার আশার প্রতিদান দিতেই হবে।’

প্রশ্ন:   আপনি সম্ভবত দুই-একবার ক্রিকেট ছেড়ে দেয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?

মুনিম শাহরিয়ার: এটা আসলে একটা সময়ে মনে হয়েছিল যে, ‘কী করতেছি আমি! মনে হয় আমার দ্বারা হবে না।’ তখন সময়টা অনেক কঠিন যাচ্ছিল, নিজের পরিশ্রমের ফলটাও পাচ্ছিলাম না ঠিকমতো।

মুনিমের প্রিয় খেলোয়াড় সাকিব

প্রশ্ন:   সিসিএস, ওল্ড ডিওএইচএস, কলাবাগান, গাজী গ্রুপ হয়ে আবাহনী। কেমন ছিল এই জার্নিটা?

মুনিম শাহরিয়ার:  প্রথম বিভাগ ক্রিকেটে অনেক ভালো খেলেছিলাম, আলহামদুলিল্লাহ। এরপরে প্রিমিয়ারে সময়টা তেমন ভালো যাচ্ছিল না, সুযোগও পাচ্ছিলাম না সেভাবে। অনেক চাপে থাকতাম, বেশ কঠিন ছিল ঐ সময়টা।  

 প্রশ্ন:   আবাহনীতে ১৪ ম্যাচে ৩৫০ রান; গড় ৩০, প্রায় ১৪৫ স্ট্রাইক রেট! এরপরেও বিপিএল ড্রাফটে দল পেলেন না? পুরনো আক্ষেপ কী আবার জাগতে বসেছিল?

মুনিম শাহরিয়ার: ১৪ ম্যাচের ১২ ইনিংসে ব্যাট করেছি, স্ট্রাইক রেট ১৪৩ ছিল। তারপরেও যখন দল পেলাম না প্রথম দুই তিনদিন স্বাভাবিকভাবেই খারাপ লেগেছে। পৃথিবীতে তো কোনোকিছুই স্থায়ী না, আর বাংলাদেশে তো সবই সম্ভব। পরে ভেবেছি, ‘ব্যাপার না। এরচেয়েও ভালো সময় হয়ত অপেক্ষা করছে।’


“শুধুমাত্র আমার না, প্রায় সব ক্রিকেটারেরই প্রিয় খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান”


 

প্রশ্ন:   গত এক যুগে বিভিন্ন সময়েই ফেসবুকে সাকিব আল হাসানকে নিয়ে অনেক পোস্ট করেছেন। বলাই যায় উনি আপনার প্রিয় খেলোয়াড়?

মুনিম শাহরিয়ার: শুধুমাত্র আমার না, প্রায় সব ক্রিকেটারেরই প্রিয় খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান।

প্রশ্ন:   সেই সাকিবের সাথেই এক দলে খেলা, ড্রেসিংরুম শেয়ার করা! অনুভূতিটা কেমন?

মুনিম শাহরিয়ার: সাকিব ভাই একজন কিংবদন্তি। উনার মতো একজনের সাথে সময় কাটানোর সুযোগ পাওয়া অনেক বড় ব্যাপার। আমার অনুভূতিটা আসলে ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। উনি আমাকে অনেক সাহস জুগিয়েছেন, অনেক পরামর্শ দিয়েছেন। যেগুলো শুধু বিপিএলেই যে আমায় সহযোগিতা করেছে তা না, আমার বিশ্বাস আমার পুরো ক্যারিয়ারেই উনার পরামর্শগুলো কাজে দিবে।

প্রশ্ন:   সাকিবের থেকে যদি একটা গুণ নেয়ার সুযোগ থাকে, কোনটা অবশ্যই নিতে চাইবেন?

মুনিম শাহরিয়ার:  উনি কখনো কোনো পরিস্থিতিতেই চাপ নেন না। সবসময়ই চাপমুক্ত থাকেন। এই জিনিসটা আমার খুব ভালো লাগে।


“নিজের চেনা ক্রিকেটটাই খেলতে চাই, নিজের খেলা নিয়ে ইতিবাচক থাকতে চাই। লক্ষ্য থাকবে নিজের সামর্থ্যের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে খেলা”


 

প্রশ্ন:   জাতীয় দলে সুযোগ পেলে কোন লক্ষ্যে এগোতে চান?

মুনিম শাহরিয়ার: নিজের চেনা ক্রিকেটটাই খেলতে চাই, নিজের খেলা নিয়ে ইতিবাচক থাকতে চাই। লক্ষ্য থাকবে নিজের সামর্থ্যের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে খেলা।

বন্ধুদের অনেকেই খেলে ফেলেছেন জাতীয় দলে

প্রশ্ন:   আপনার মতো অনেক খেলোয়াড়ের জীবনের গল্পটাও একইরকম। আপনি যদি এত বাধা, এত খারাপ সময় পেরিয়ে জাতীয় দলে পৌঁছতে পারেন, তাহলে এটা সেইসব খেলোয়াড়দের জন্য অনেক বড় একটা বার্তা হতে পারে কী না?

মুনিম শাহরিয়ার: অবশ্যই হতে পারে। আমি জানি, অনেক জায়গায় অনেক ভালো খেলোয়াড় আছে যারা সুযোগটা পাচ্ছে না। যাদের অনেক আক্ষেপ, এমনকি খেলাটা ছেড়ে দেয়ার চিন্তাও হয়ত করছেন অনেকে। তাদের জন্য আমার জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়াটা একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আনলেও আনতে পারে। তাদের মনে হতে পারে, ‘লড়ে যাই, একদিন নিশ্চিতভাবেই সুযোগ আসবে। পরিশ্রম করে যেতে হবে।’ আমি নিশ্চিত নই যদিও।

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -

সর্বশেষ

- Advertisement -
- Advertisement -spot_img