২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার

‘উপহাস করা মানুষগুলোই এখন দেখলে ছুটে আসে’

- Advertisement -

চোখ বন্ধ করে একবার মোহাম্মদ রিজওয়ানকে কল্পনা করুন তো! নিশ্চয়ই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেরই কোনো ছবি ভাসছে? টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে গত বছরে করেছেন দুই হাজার রান, আইসিসির সেরা টি-টোয়েন্টি খেলোয়াড়ের পুরস্কারটাও জিতেছেন। রিজওয়ানকে মনে করলে তার সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছানোর গল্পটাই তাই বারবার মনে পড়বে। কিন্তু পথটা যে ছিল না এতটাও সহজ সেটা কি জানেন?

খুব বেশী না, এক বছর পেছনে যাওয়া যাক। ডিসেম্বর, ২০২০; নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ। প্রথম দুই ম্যাচেই ব্যর্থ রিজওয়ান, ততোদিনে নিজে দেশের মানুষই বলতে শুরু করেছে টি-টোয়েন্টির জন্য যোগ্য না এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। সবদিক থেকে চাপে থাকা রিজওয়ান তৃতীয় ম্যাচে মাঠে নামার আগেই ভেবেছিলেন এটাই হতে যাচ্ছে টি-টোয়েন্টিতে তার শেষ ম্যাচ।

“২০২১ সালের আগে আমি বেশিরভাগ ম্যাচেই বেঞ্চে বসে থাকতাম। যদি সুযোগ পেতাম, সেটাও ছয় কি সাত নম্বর পজিশনে। টি-টোয়েন্টিতে নিজের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কায় ছিলাম। নিউজিল্যান্ড সিরিজে প্রথম দুইটা ম্যাচেও পারফর্ম করতে পারিনি। এখনও মনে আছে তৃতীয় ম্যাচের আগে ইফতি ভাইকে বলছিলাম এটাই টি-টোয়েন্টিতে আমার শেষ ম্যাচ।”

নিজের শেষ ম্যাচ খেলতে নামা রিজওয়ানের গল্পটা এরপর থেকে শুরু। কিউইদের বিপক্ষে ঐ ম্যাচে খেললেন ৮৯ রানের এক হার না মানা ইনিংস। ঐ সিরিজের আগে সময় কাটত বেঞ্চ গরম করতেই, ব্যাটিংয়েও পেতেন না সুযোগ। নিজের খেলা ৭৫ টি-টোয়েন্টির আটটিতে করেছিলেন ওপেনিং, সেটাও আবার এক ঘরোয়া লিগে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ঐ সিরিজেই প্রথমবার নেমেছিলেন ওপেনিংয়ে, আর তাতেই বাজিমাত।

এই ম্যাচ থেকেই রিজওয়ানের গল্পের শুরু

একটা সময় ছিল যখন তাকে কেউ চিনত না, ছবি তোলার জন্যও এগিয়ে আসত না কেউ। ‘ব্র্যাডম্যান’, ‘স্যার রিজওয়ান’ বলে উপহাস করত নিজ দেশের মানুষেরাই। দৃশ্যপট বদলেছে, এখন অলিতে গলিতে সকলেই চেনে তাকে। দেখলেই দৌড়ে আসে ছবি তুলতে, অটোগ্রাফ নিতে। আর এই দলে আছে শিশু থেকে বৃদ্ধরাও। রিজওয়ানের কাছে এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া।

“লোকে উপহাস করে আমায় ‘ব্র্যাডম্যান’, ‘স্যার’ বলত। এটা আমায় ভীষণ কষ্ট দিত। এখন দৃশ্যপট বদলেছে। কেউ দেখলেই বলে ওঠে ঐ যে রিজওয়ান ভাই যাচ্ছে। এটা আমার সবচেয়ে বড় অর্জন।”

রিজওয়ান শুনিয়েছেন বদলে যাওয়া দৃশ্যপটের গল্পটাও, “বাংলাদেশের সাথে সিরিজ শেষে পাকিস্তানে ফিরেছি মাত্র। এয়ারপোর্টে বসে ছিলাম শাহীন আফ্রিদির সাথে। হঠাৎ সে আমাকে বললো বয়স্ক একজন অনেক সময় ধরে আমার অপেক্ষা করছে। কারণ জানতে চাইলে শাহীন জানালো সেই বৃদ্ধ মানুষটা নাকি আমার সাথে ছবি তুলতে চায়। আমি তার নিকট গেলাম, ছবি তুললাম। উনি আমাকে জরিয়ে ধরলেন, চুলে হাত বুলিয়ে দিলেন। দলের একজন আমাকে এসে বললেন, ‘এই মুহুর্তটার কথা নিশ্চয়ই কোনোদিন ভাবোনি? এটাই তোমার অর্জন, তুমি ইজ্জত কামিয়েছো।‘ পুরো পাকিস্তান দল সেখানে ছিল, কিন্তু ঐ বৃদ্ধ মানুষটি শুধুমাত্র আমার জন্যই অপেক্ষা করছিল। এই মুহুর্তটা আমি কখনোই ভুলব না।”

রিজওয়ান শুনিয়েছেন করাচি বিমানবন্দরের আরও একটা গল্প, “করাচি বিমানবন্দরে ছোট্ট একটা বাচ্চা মেয়ে আমাকে দেখেই বলে উঠে, ‘এই, রিজওয়ান!’ আমি তাকে দেখেই আমার হাত মেলে ধরি আর সে ছুটে এসে আমায় জরিয়ে ধরে এবং কেঁদে দেয়। ঐ মুহুর্তে ভাবছিলাম আল্লাহ চাইলে কিই না করতে পারেন!”

ভক্তদের ভালোবাসায় সিক্ত রিজওয়ান

রিজওয়ানের একটাই চাওয়া, করতে চান এমন কিছু যেটা করেননি কেউই, “আমি সবসময়ই এমন কিছু করতে চেয়েছি যা কেউ করছে না, কেউ করেনি। আমি মাঝে মাঝেই আমার স্ত্রীকে বলি আমি এমন কিছু করতে চাই যেটা কখনো কেউ করেনি।”

দুদিন আগেও যেই রিজওয়ানকে দেখলে সবাই উপহাস করত, আজ সেই রিজওয়ানই সকলের মধ্যমণি। ক্রিকেট ছেড়ে দেয়ার কথা ভাবা ছেলেটাই এখন পাকিস্তানকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে শিরোপা এনে দেয়ার। সত্যিই বড় বিচিত্র এই জীবন। কল্পনার চেয়েও সুন্দর যে জীবন।

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -

সর্বশেষ

- Advertisement -
- Advertisement -spot_img